করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জামিন বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও জরুরী বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় যৌক্তিক সময়ের জন্য মুলতবি করার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ নির্দেশ দেশের নিম্ন আদালতের জন্য প্রযোজ্য হবে।

রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত সার্কুলারে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত (কোভিড-১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে জামিন/অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও জরুরী বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় যৌক্তিক সময়ের জন্য মুলতবি করা আবশ্যক। এমন অবস্থায় দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে জামিন/অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও জরুরী বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় যৌক্তিক সময়ের জন্য মুলতবি করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে জারি করা এই সার্কুলার অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে , প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির সাথে তার খাস কামরায় সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান বিচারপতির সাথে আইনমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান জানান, করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আলোচনা করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধস্তন আদালতের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্য দিকে, প্রধান বিচারপতির সাথে সক্ষাতের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে জানান, আইনজীবীদের উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়েছি। আদালত বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান বিচারপতি অন্য বিচারপতিদের সাথে বসবেন। ২৬ মার্চের আগে এটি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বলেন, রাষ্ট্রের অন্য সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে কী পদক্ষেপ নেয়, তাও তিনি (প্রধান বিচারপতি) বিবেচনায় নিবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ আর্ট নিউজে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে একটি মন্তব্য প্রতিবেদ প্রকাশিত হয়। তাতে আদালতে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য তিন ধাপের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় প্রথম ধাপ কার্যকর করা। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী ধাপগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়।
মন্তব্য প্রতিবেদনটিতে বলা তিনটি ধাপ ছিল:
“প্রথম ধাপ: নতুন আটক/গ্রেফতার হওয়া আসামীরাই শুধু কোর্টে আসবে। যে মামলার পক্ষদের আদালতে না আসলেই না, তেমন বাদী-বিবাদী কোর্টে আসবেন। অন্যান্য মামলার, বিশেষত সিভিল মামলার বাদী-বিবাদী কোন পক্ষেরই কোর্টে আসার দরকার নেই। তাদের পক্ষে প্রতি মামলায় একজন করে (অনেক মামলায় বাদী-বিবাদীর পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত থাকেন) আইনজীবী উপস্থিত থাকবেন। এতে আদালত কক্ষে স্বল্প সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় এটি হতে পারে প্রাথমিক পদক্ষেপ।
দ্বিতীয় ধাপ: পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাবনা সামনে আসবে। তখন সব আদালত বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন শুধু একটি আদালত বসবে জরুরী/জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার জন্য। সপ্তাহে দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) বসবে বিশেষ আদালত। জামিনসহ অন্যান্য জরুরী মামলাগুলো চলবে সেই আদালতে। অনেকটা শীত ও গ্রীষ্মকালীণ অবকাশে আদালতের কার্যক্রমের মত।
তৃতীয় ধাপ: পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তখন আদালত পুরোপুরি-ই বন্ধ ঘোষণা হবে। আপীল বিভাগ, হাইকোর্ট, জজকোর্ট ও সিএমএম কোর্ট… সব আদালতের ক্ষেত্রেই এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যেতে পারে।”