আইসক্রীম ও আইসক্রীমওয়ালা: রীপন শওকত রহমান

0
604

রীপন শওকত রহমান। এক সময় নাট্যকর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা থিয়েটার, নাগরিক নাট্যাঙ্গন ও উদীচী শ্পিী গোষ্ঠীর সাথে। অভিনয়ের টানে থিয়েটার স্কুল থেকে ডিপ্লোমাও করেছিলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। লিখেছেন নিজের শৈশবের কথা। পাঠক যখন লেখক পাতায় আজ থাকছে রীপন শওকত রহমান-এর লেখা:

নিজের ভেতর গতকাল থেকে একটা অনুভূতি হচ্ছে যা অনেকটা বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু’র অনুভূতির মতো। ওই যে, পেটেন্ট করার তাগিদের অভাবে বেতার তরঙ্গ নিয়ে তার আবিস্কার চলে গিয়েছিল অন্যের দখলে। আমার স্বপ্নে পাওয়া আইডিয়া গুলোও পেটেন্ট করার অভাবে অন্য অনেকের দখলে চলে গিয়েছে। স্বপ্নে পাওয়া আইডিয়া যদি স্বপ্ন ভাঙ্গার পরে নাই হয়ে যায় তাহলে কাকেই বা দোষ দেই, বলুন! মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মনকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা যায় যাতে ঘুমের মধ্যেই স্বপ্নে পাওয়া আইডিয়ার মূল ভাবনাটুকু কাগজ-কলমে লিখে নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে, বিছানার পাশে কাগজ কলম রাখতে হবে এবং স্বপ্ন দেখা মাত্র অন্ধকারেই কাগজে কলম চালাতে হবে। ইহজীবনে সে সাধনা করা হবে কিনা বা করলেও সফল হতে পারবো কিনা, সেই ফলাফল আগামীর জন্য তোলা থাক। আপাতত জগদীশ অনুভূতির কথাই বলি।

সপ্তাহখানেক আগে জানিয়েছিলাম, শৈশব-কৈশোর নিয়ে কিছু লিখবো। তা ওই বলা পর্যন্তই থেকে গেল। আলসেমী এবং মানসিক চাপ মিলে এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যে, অবসাদ চেপে ধরে যখন তখন। বাজারে ব্যাপারীর খাঁচায় বন্দি মুরগির মতো ঝিমিয়েই কেটে যায় দিন-রাত। তো, এভাবে ঝিমুতে ঝিমুতে একটা পোস্ট চোখে পড়লো। পোস্টটি ছিল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ছড়াকার, শিশু সাহিত্যিক, হাসিখুশী মজার মানুষ লুৎফর রহমান রিটন ভাইয়ের। যাকে আমি ‘ওস্তাদ’ বলে ডাকি ভীষণ শ্রদ্ধা নিয়ে। চোখ কচলে নিয়ে পুরোটা পড়লাম। আইডিয়া চুরির হালকা অনুযোগ জানিয়ে কথা দিয়ে রাখলাম যে, সজাগ (হজাক) হয়ে জবাব লিখছি এবং তাঁকে ট্যাগ করছি। মুস্কিল হচ্ছে, আমি রিটন ভাইয়ের মতো সংক্ষিপ্ত ও সুমিষ্ট করে লিখতে পারি না। তিনি নিজেই লিখেছেন- “সিম্পল ইজ গুড। স্মল ইজ বিউটিফুল।” আমার লেখাগুলো কেমন জানি মাজহার ভাইয়ের লেখার মতো বেশ বড় হয়ে যায়। যদিও লেখার সারবস্তুতে মাজহার ভাইয়ের গুনের ও জ্ঞানের ধারেকাছেও থাকে না। থাকার কথাও না। “দুই পয়সার শৈশব” শিরোনাম দিয়ে লেখা রিটন ভাইয়ের লেখাটি সবাইকে পেছনে তাকাতে বাধ্য করবে, চোখের কোনে চিকচিক করা অশ্রুবিন্দু টেনে আনবে এবং সর্বোপরি, বুকের ভেতর একটা টনটনে অনুভূতির জন্ম দেবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি।

অনেকগুলো দিক নিয়ে লিখেছেন রিটন ভাই। সেখান থেকে কয়েকটা দিক নিয়ে আমার স্মৃতির ঝাঁপি খুলতে ইচ্ছে করছে। আমাদের দু’জনার স্মৃতিকথায় মোটাদাগে কমপক্ষে দু’টা পার্থক্য থাকবেই। যেমন, তিনি বড় হয়েছেন পুরনো ঢাকায় আর আমি মিরপুরের বিহারীদের মাঝে এবং আমাদের দু’জনার সময়কালের মাঝে আছে কয়েক বছরের ব্যবধান। পরিবেশনায় পার্থক্যের কথা আলাদা করে নাইবা বললাম।

আইসক্রীমের স্বাদ, গন্ধ, রঙ ও প্রকার আমাদের উভয়ের সময়েই প্রায় কাছাকাছি ছিল। পার্থক্য ছিল কেবল মূল্যে। তার সময়ের দুই পয়সার খাঁটি বরফের আইসক্রীম আমার সময়ে এসে হয়েছিল পাঁচ পয়সা কিংবা এক আনা। লাল, নীল, কমলা, সবুজ রঙের শক্ত বরফের আইসক্রীম গুলোতে একটু রঙ আর একটু চিনি বা স্যাকারিনের বাইরে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে তা ছিল ফ্লেভার বা ঘ্রাণ। একটু নরম হবার পরে কামড় দেয়াটাই নিরাপদ ছিল। তা নইলে কোনটা বরফের টুকরো আর কোনটা ভাঙা দাঁত তা বুঝতে পারা কঠিন হয়ে যেত। কাঠি ধরে সেই আইসক্রিমে জোরে চুষলেই স্বাদ ও রঙ মুখ হয়ে পেটে চলে যেত আর আইসক্রীম নিজে স্বাদহীন ফ্যাকাসে হয়ে যেত। অনেকটা টম অ্যান্ড জেরী কার্টুন ছবিতে ভয়ে যেভাবে টম ফ্যাকাসে হয়ে যায়, সেভাবে। আমরা রঙিন জিভ একে অপরকে দেখাতাম আর অকারণে রঙিন দাঁত বের করে হাসতাম। নিম্নবিত্ত আইসক্রীমের দিলখুশ করে দেয়া রঙিন হাসি। মধ্যবিত্ত টাইপের একটা আইসক্রীম ছিল, সেটা খুব একটা খেয়েছি বলে মনে পড়ে না। তাই স্বাদ-গন্ধ কিছুই মনে নাই। তবে উচ্চবিত্ত টাইপের যে মালাই আইসক্রীম ছিল, ইগলু কাপ আইসক্রীমে উত্তরণের আগে সেটা বেশ কয়েকবার খেয়েছি। দুধ, নারকেল ও সুন্দর ঘ্রাণ দিয়ে বানানো নরম নরম সেই উচ্চবিত্ত আইসক্রীমের দাম ছিল চার আনা। পকেটে চার আনা যে একেবারেই থাকতো না, তা নয়। তবে চার আনা থাকলেই যে পুরোটা আইসক্রীমের পেছনে বরাদ্দ করাটা বোকামী হবে, তা সেই সময়েই বুঝে গিয়েছিলাম। বেতফল, কৎবেল, ভূট্টাপোড়া, লটকন, চালতার আচার কিংবা একহাত সমান করে কাটা আখের টুকরো যা গ্যান্ডারী নামেই অধিক পরিচিত ছিল, সেগুলোর জন্যও তো বরাদ্দ থাকতে হবে, নাকি! তাই অধিকাংশ সময়েই রঙিন বরফের চাঁই চেটেই মিতব্যায়ীতার পরিচয় দিতাম।

আইসক্রীমের গল্পের চেয়ে আইসক্রীমওয়ালা ও আইসক্রীমওয়ালার সাথে কাটানো আমার সময়ের গল্প বলতে বেশী ব্যাকুল লাগছে। আমার ছোটবেলার আইসক্রীমওয়ালার নাম ছিল বাবু। কোন বাবু? বাবু’র মায়ের ছেলে বাবু। হাসবেন না দয়াকরে। এটাই ছিল ওর পরিচয়। আমাদের সহ আরো ৪-৫ টা বাসায় বাব’র মা ছুটা বুয়া হিসেবে কাজ করতো, বাজার করে দিতো। বিক্রমপুরের এক অসম্ভব লড়াকু নারী ছিলেন বাবু’র মা। অনেকগুলো ছেলেমেয়ে ছিল তার। দুই-তিন টা ছেলেমেয়ে ভারত থেকে এটাসেটা এনে কালোবাজারে বিক্রি করতো। স্বামী বিকেল হলেই বাদাম ভেজে টুকরীতে নিয়ে গামছা দিয়ে গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে “ছিনা বাদেম। গররম গররম ছিনা বাদেম” বলতে বলতে বেরিয়ে যেতেন। তিনি ছিলেন বাবু’র বাপ। হ্যাঁ, বাবুর বাপ। এছাড়া অন্য কোনও নামে আমরা তাকে চিনতাম না। তো, সেই বাবুর মা’র ছেলে বাবু ছিল পরিবারে সবার ছোট। আমার ৭-৮ বছরের বড় বয়সের অসম বয়সী বন্ধু। কখনো স্কুলে গিয়েছিল বলে মনে পড়ে না। আমি তার সাথে খেলতাম, যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতাম, একটা আইসক্রীম কিনে দু’জনে দু’পাশ থেকে কামড়ে কামড়ে খেতাম। একদিন হঠাৎ করে দেখলাম, বাবু নিজেই আইসক্রীম বিক্রি করছে। কি যে খুশী লাগলো! বন্ধুর কাছে তখন অনেক অনেক আইসক্রিম। একটা চারকোনা বাক্স কখনো মাথায় আর কখনো বেল্ট দিয়ে ঘাড়ে ঝুলিয়ে হেঁটে হেঁটে আইসক্রীম বিক্রি করতো। এক হাতে থাকতো একটা পেতলের ঘন্টা।

একদিন আমাকে ডেকে বললো, ‘চল, কারখানায় মাল আনতে যাই।’ প্রচণ্ড কৌতুহল নিয়ে আইসক্রীমের কারখানা কি বস্তু, তা দেখতে পিছু নিলাম। আমি তখন ৬ কিংবা ৭ আর বাবু ১৩ বা ১৪। সেদিনের পর থেকে যখন তখনই আমি বাবু’র সাথে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম পথ থেকে পথে। কি করে ও অসম্ভব ভারী একটা বাক্স বয়ে চলে, কি করে এত্তোগুলো আইসক্রীম নিজের কাছে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সামলে রেখে একটা আইসক্রীমও না খেয়ে থাকতে পারে, কি করে ওর কোমড়ে থাকা পোটলাটা খুচরো পয়সায় ভারী হতে থাকে আর আইসক্রীমে ভরা ভারী বাক্সটি হালকা হতে থাকে- অবাক বিষ্ময় নিয়ে তা আমি শুধু দেখে যাই।

অপুষ্টিতে ছোট হয়ে থাকলেও আমার চেয়ে ও ঢের বড় ছিল। ওর কদম ছিল আমার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বড়। আমি প্রায়ই পিছিয়ে পড়তাম। একটুও অধৈর্য্য না হয়ে আমার জন্য সে ধীরপায়ে হাঁটত। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লে, বন্ধু আমার বাক্সটি রাস্তায় রেখে আমাকে বাক্সের উপরে বসিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো বা ভাগাভাগি করে পাশেই বসতো। আমরা বসে থাকলেও ব্যবসা যেন বসে না যায়, তাই হাতে থাকা ঘন্টা বাজিয়ে লোক জড়ো করা যেন চলতে থাকে, সেদিকেও খেয়াল ছিল।

বরফ দিয়ে বানানো আইসক্রিমের সেমি অটো ফ্যাক্টরি

অমল কিংবা দৈ ওয়ালা- কারো সাথেই আমার তখনো পরিচয় হয়নি। কিন্তু তখনই ফেরিওয়ালা হয়ে গিয়েছিলাম ওর সাথে চলতে চলতে। কতো জায়গায় যে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি বাবুর সাথে! পশ্চিমে দিকে ফাইজার ফার্মাসিউটিক্যাল বা মিল্ক ভিটা ফ্যাক্টরী এলাকা, যার নাম আরামবাগ। আরেকটু পর থেকেই আজকের রূপনগর এলাকা শুরু। তখন ছিল বিল। সেই বিলের আরও পশ্চিমে ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেনের সীমানা। উত্তর দিকে যেতাম বিআরটিসি বাস ডিপো- মুসলিম বাজার ঘুরে কালশী। পূর্ব দিকে যেতাম আজকে যেখানে পলাশনগর, তা ছাড়িয়ে মানিকদি’র দিকে। পলাশনগর জায়গায় তখন টিলা কেটে কেটে বুলডোজার দিয়ে সমান করা চলছিল। আমরা সেই নতুন সমান করা জায়গায় ফুটবল খেলতে যেতাম। এপাড়া বনাম ওপাড়া ম্যাচ হতো। পুরস্কার থাকতো ৭ থেকে ১৫, যেকোন বেজোড় সংখ্যার কাঁচের গ্লাস। ভাল পরিমাণে চাঁদা তুলতে পারলে ৬-১০ ইঞ্চি আকারের শীল্ড থাকতো কখনও কখনও। দক্ষিণ দিকে যেতাম মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজার পেরিয়ে ১০ নম্বর সেকশনের জল্লাদখানা বধ্যভূমি ছাড়িয়ে ফকির বাড়ী পর্যন্ত। এত এত পথ চলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে অনেক সময় আমাকে পাঁচ পয়সা দামের সেই নিম্নবিত্ত আইসক্রীম ধরিয়ে দিয়ে বাক্সের উপরে বসিয়ে দিয়েছে। আড় চোখে দেখেছি, নিজের পকেট থেকে পাঁচ পয়সা নিয়ে কোমড়ে থাকা পোটলায় চালান করে দিত, আমাকে আড়াল করে। গলা তখনও যেমন বুজে আসতো, ভাবতে গেলে এখনও তাই হয়। কী পরিমাণ ভালবাসা থাকলে শৈশব-কৈশোর হারানো একটা ছেলে অসমবয়েসী ও তুলনামূলক অবস্থাসম্পন্ন ঘরের বন্ধুকে রক্ত-ঘাম নিংড়ানো উপার্জনের একটা অংশ নির্দ্বিধায় তুলে দিতে পারে! ভারী একটা বাক্স মাথায় নিয়ে আইসক্রীম ফেরি করে পথে পথে ঘুরে কতই বা আয় হতো!? কোনোদিন দশ পয়সা দিতাম আর দু’টা আইসক্রীম কিনে একটা ওঁকে দিয়ে অন্যটা আমি খেতাম। কোনোকোনো দিন দশ পয়সা দিলে আমাকে চার আনা দামের মালাই আইসক্রীম দিয়ে বলতো- “তুই খা। আমি খামু না”। কি জানি! আমরা হয়তো এভাবে একে অপরের সঙ্গ বিকিকিনি করতাম!

আমাদের সেই অনিয়মিত আইসক্রীম বিক্রির নামে ঘুরে বেড়ানো পথের পাশে বিভিন্ন মহল্লায় থাকা ফটো স্টুডিওর সামনে এলেই আমাদের একহালি পা ধীর হয়ে যেত। বিজ্ঞাপনের মতো করে স্টুডিওর সামনে সাঁটানো বা ঝুলিয়ে রাখা ছবি দেখতাম হা করে। ভারতের ড্রীম গার্ল হেমা মালিনী আর বাংলাদেশের ড্রীম গার্ল অলিভিয়া’র ছবি পাশাপাশি থাকতে দেখতাম। একদিন তো এলাহী ভরসা বলে একটা স্টুডিওতে ঢুকেই গেলাম ছবি তুলতে। আইসক্রীমের বাক্সের উপরে আমি বসা আর আমার পেছনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাবু- এভাবেই ফ্রেমটা ছিল। ফটোগ্রাফার চেয়েছিল আমাদের দু’জনকে বাক্সের উপরে পাশাপাশি কিন্তু কোনাকুনি বসিয়ে ছবি তুলতে। কিন্তু বাবু তা পছন্দ করলো না। সেদিন ও কেন অমন করেছিল তা আজ বুঝতে পারছি। ও আসলে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ছেঁড়া-ময়লা জামাকাপড় আড়াল করতে চেয়েছিল। ’৭০ দশকে স্টুডিওতে তোলা সাদাকালো ছবিতে সুপার ইম্পোজ করা হতো ছবির কোনায় কোনায়, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে! বেশীরভাগ সময়েই অষ্টকোনের দশ পয়সার কয়েনের সাহায্যে উপরে দুই কোনায় দুইটা মুখ আলাদা করে দেয়া থাকতো! খরচ একটু বেশীই লাগতো এই সিস্টেম করতে। আমরা সেটাও করেছিলাম। ইতিহাসের ঠিক কোন সময়ে সেই ছবি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তা মনে নেই। তবে যখন টের পেয়েছি তখন সেই স্টুডিও খুঁজে আবার গিয়েছিলাম কপি তুলবার জন্য। কিন্তু ততদিনে স্টুডিওওয়ালা ব্যবসা গুটিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিল।

২০১৭ সালে ঢাকায় গিয়ে সেই পুরনো এলাকায়, পুরনো পথে পথে পুরনো মুখগুলো খুঁজে বেড়িয়েছি। অসময়ে প্রায় বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া মুদি দোকানদারের সাথে কথা বলছিলাম আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। আবছা হয়ে আসা দিনের আলোয়, প্রায় পুরোটাই সাদা হয়ে যাওয়া এক গাল দাড়ি নিয়ে কাউকে পাশের দোকানের সামনে থেকে চোরা চোখে আমার দিকে তাকাতে খেয়াল করেছি কয়েকবার। ঢোক গিলে নিয়ে মুদি দোকানদারকে প্রশ্ন করলাম- ওটা কি বাবু না! মুদি মাথা নেড়ে বললো- চিনছেন তাইলে? আমি এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই অপরাধবোধে কাচুমাচু হয়ে বললো- ‘আমি মুনে করছিলাম যে অহনে আমারে চিনবার পারবি না। তাই সামনে যাই নাইক্যা।’ একটা ঝাড়ি দিয়ে বললাম যে, ‘বয়স হইছে তাই মাইর দেই নাইক্যা।’ আর মুদি দোকানীকে বললাম- ‘তোমার ফিরিজ থিকা আমাগোরে দুইটা ফাসকেলাশ আইসক্রীম দাও।’

বিশেষ দ্রষ্টব্য: রিটন ভাই, লেন্ডি বাজার ওরফে নিক্সন মার্কেট এবং মার্বেল/গুল্লি বা মাউরা ভাষায় ‘গোলি’ নিয়া কিস্তি পাওনা থাকলেন। বিরক্ত হইলেও কিচ্ছু করার নাই। উস্কানী যখন দিয়েছেনই তখন এইটুকু যন্ত্রণা মেনে নিতেই হবে, ওস্তাদ।