প্রথমবার ফাইনালে এসেই বাজিমাত করলো বাংলাদেশের কিশোররা। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব জয় করলো মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের উত্তরসূরিরা। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালটা বেশ দাপটের সাথেই নিজেদের করে নিল আকবর, পারভেজ, জয়, শরীফরা।
রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান আকবর আলী। বাংলাদেশের বোলাররা ১৭৭ রানেই আটকে রাখে ভারতকে। ১৭৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ২৩ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় আকবর আলীরা। বাংলাদেশের ইনিংসে বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ নেমে আসে ৪৬ ওভারে। তাতে বাংলাদেশকে জয় পেতে বেগ পাওয়া লাগেনি।
বাংলাদেশের দুই ওপেনার শুরুটা করেছিলেন বেশ মারদাঙ্গা স্টাইলে। দলীয় রান অর্ধ শতকে পৌঁছায় ৮ দশমিক ৫ ওভারেই। বিপদটা শুরু হয় এখানেই। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। ২৫ বলে ১৭ করে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। দুই বাউন্ডারি আর এক ছক্কার মার ছিল এতে।
তানজিদের পতনের সাথে সাথে বাংলাদেশও থমকে দাঁড়ায় ভারতের ঘূর্ণি জাদুতে। ৫০ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের ৪ উইকেট নাই হয়ে যায় ৬৫ রানে। লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণু যেন সাক্ষাত যমদূত হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে।
৪ ওভারের প্রথম স্পেলে রবি আতঙ্ক ছড়ান বাংলাদেশ শিবিরে। এই স্পেলে ১১ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে তার সংগ্রহ চার উইকেট। সুশান্ত মিশ্রের সংগ্রহ দুই উইকেট।
বাংলাদেশের ইনিংসের ১৩তম ওভারে রবির শিকারে পরিণত হন মাহমুদুল হাসান জয়। একই ওভারে পায়ে আঘাত নিয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার পারভেজ ইমন। রানের খাতা না খুলেই ফিরে যান তৌহিদ হৃদয়।
ইমনের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক আকবর আলী। ধ্বংস স্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন অধিনায়ক আকবর। শাহাদাতকে নিয়ে সে চেষ্টা ুব একটা সফল হয়নি। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে দলীয় ৬৫ রানে বিদায় নেন শাহাদাত।
অধিনায়কের সাথে ২০ রানের জুটি গড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শামীম। অভিষেকের সাথে আকবরের জুটিটা ১৭ রানের।
আকবর আলী সতীর্থদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে ছুতে চাইছিলেন ভারতীয়দের মামুলি স্কোরকে। কিন্তু বাংলাদেশের ৭ উইকেট পতনে ভারতীয় যুবারা যেন জয়ের হাতছানি দেখছিলেন। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানো ম্যাচে তখন নাটকীয়তার অনেকটাই বাকি।
সপ্তম উইকেটের পতনের পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরা ওপেনার পারভেজ ইমন আবার ব্যাটিংয়ে নামেন। আকবর-ইমন জুটি ৪২ রান করলে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। ১৮ দশমিক ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ৩৫ রান। কিন্তু উইকেট স্বল্পতার চোখ রাঙানি লাল-সবুজের দিকে।
পারভেজ ইমন এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ তুলে দিলে উল্লাসে মাতে ভারতীয় সমর্থকরা। দলীয় সংগ্রহ তখন ১৪৩ রান। ফেরার আগে ৭৯ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসের ইতিহাস গড়ে ইমন। ৭ বাউন্ডারিতে সংগ্রহ ৪৭ রান।
বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হলো। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ তখন ১৬ রানে এগিয়ে। খেলা আর না হলেও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। তবে বৃষ্টি খুব বেশি সময় থাকলো না। না খেলে নয়, খেলেই যেন বাংলাদেশ চ্যা্পিয়ন হয়… সে কারণেই যেন বিদায় নিল বৃষ্টি। বাংলাদেশকে দেয়া হলো নতুন টার্গেট।
৩০ বলে ৭ রানের টার্গেট নিয়ে বৃষ্টি শেষে মাঠে এলেন আকবর আর রাকিব। ম্যাচ শেষ করতে বেশি সময় নেননি তারা। অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নশীপ নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়লেন তারা। তবে দলের জয় নিশ্চিত করতে অসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন এই দুই কিশোর। এক পর্যায়ে তারা ক্রিজে টিকে থাকতে মরিয়া ছিল। হাতে উইকেট বেশি না থাকায় তারা একটানা ১৪টি ডট বল উপহার দিয়েছেন ভারতীয় বোলারদের।
এর আগে টস হেরে ভারতীয়রা ব্যাটিংয়ে নামে। শুরুতেই তাদের ওপর আঘাত হানে বাংলাদেশ। দলীয় ৯ রানে সাজঘরে ফেরে সাক্সেনা। যশোস্বী জসওয়াল তিলক ভার্মাকে নিয়ে বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন। এই জুটি ৯৪ রান করে বিচ্ছিন্ন হয়।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে ভারতীয় উইকেটের পতন হতে থাকে। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮ রান করেন যশোস্বী। ১২১ বলে ৮৮ রান করেন তিনি। এতে ৮টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা ছিল।
বাংলাদেশের হিসেবি বোলিংয়ে ১৭৭ রানেই থেমে যায় ভারতীয় ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৭ দশমিক ২ ওভার, ১৭৭ (যশোস্বী ৮৮, তিলক ৩৮, ধ্রুব ২২; অভিষেক ৩/৪০, সাকিব ২/২৮, শরিফুল ২/৩১)
বাংলাদেশ: ৪২ দশমিক ১ ওভার, ১/১৭০ (পারভেজ ইমন ৪৭, আকবর আলী ৪৩*; রবি বিষ্ণু ৪/৩০)।
ফল: বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী হয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
ম্যান অব দ্য ফাইনাল: আকবর আলী