কাজী তামান্না তৃষা: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে। চাইল্ড রিসার্চ হেলথ ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার এ ঘোষণা দিয়েছে। এ জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের গতি প্রকৃতি নির্ণয় করা যাবে। এই জিনোম সিকোয়েন্সের মূল কারিগর ডক্টর সমীর সাহা ও তার মেয়ে সেঁজুতি সাহা।
ডক্টর সমীর সাহার আদি বাড়ি নোয়াখালীতে। তার বাবা চন্দ্রকান্ত সাহা ব্যবসাসূত্রে চাঁদপুর শহরের কদমতরায় স্থায়ী আবাস গড়েন। মা দুলারী প্রভা সাহা। সমীর সাহারা চার ভাই-বোন। তার ডাকনাম তাপস। জন্ম ২৮ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সাল।
সমীর সাহা চাঁদপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীব বিজ্ঞান) বিভাগে। ১৯৮৩ সালে তিনি বিএসসি ও ১৯৮৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৯ সালে ভারতের বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে।
পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর ফিরে আসেন পুরনো কর্মস্থল শিশু হাসপাতালে, গবেষণা কাজে। তার গবেষণার ক্ষেত্র- নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এন্টারিক জ্বর। নবজাতকদের সংক্রামক রোগগুলোর জন্য গবেষণা করে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।
ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিতে অসামান্য গবেষণার জন্য তিনি ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি অ্যাওয়ার্ড’ পান ২০১৭ সালে। এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোন গবেষকই এর আগে এই অ্যাওয়ার্ড পাননি। এর ধারাবাহিকতায় তিনি আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজিতে তিনি ফেলো নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালেই তিনি মাইক্রোবায়োলজিতে ‘ইউনেস্কো কার্লোস জে ফিনলে’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের নভেম্বর ২০১৭ সংখ্যার একটি নিবন্ধে সমীর সাহার গবেষণা নিয়ে ইতিবাচক উপস্থাপন ছিল। নিবন্ধটি প্রকারে পর সমীর সাহাকে নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিনের সাধারণ দিকগুলো নিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন অ্যাক্সেস সেন্টারে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’।
‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিল গেটসের পছন্দের মানুষে পরিণত হন ডক্টর সমীর সাহা ও তার মেয়ে, মাইক্রোবায়োলজিস্ট সেঁজুতি সাহা। বিল গেটস নিজের ব্লগে লিখেছেন সমীর সাহা ও তার মেয়ে সেঁজুতিকে নিয়ে।
সমীর সাহার দেড়শ’রও বেশি নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে পিয়ার-রিভিউ জার্নালগুলোতে। এসব নিবন্ধের অধিকাংশই শিশুদের নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস বিষয়ক।
সমীর সাহা জন হফকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগী এবং আইসিডিডিআর,বি-এর একজন বিজ্ঞানী। ডক্টর সমীর বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় টিকা নীতি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি নিউমোকোকল অ্যাওয়ারনেস কাউন্সিল অব এক্সপার্টস (পিএসিই)-এর সদস্য। একই সাথে সাবিন ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট (টাইময়েড) (সিএটি) এর স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান।
সমীর সাহার পরিবারকে ‘অণুজীব বিজ্ঞানী পরিবার’ বলা চলে। তার স্ত্রী সেতারুন নাহারও একজন অণুজীব বিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে একই ব্যাচে পড়তেন সমীর সাহা ও সেতারুন নাহার।
সেতারুন নাহার সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে সেঁজুতি সাহা টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। ছেলে সুদীপ্ত সাহা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীব বিজ্ঞান ও গ্লোবাল হেলথ বিষয়ে পড়ছেন।