করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে লকডাউন। বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে ঘরে থাকার। কিন্তু তারপরও বেরুচ্ছেন অনেকেই। তারা বলছেন, কাঁচাবাজারের জন্য বাধ্য হয়ে প্রতি সপ্তাহে বাইরে যেতেই হচ্ছে। অথচ একটু বুদ্ধি করে বাজার করলে অন্তত ২০/২২ দিন আপনাকে বাইরে না গেলেও হয়। লকডাউনের এই সময়ে কাঁচাবাজার থেকে কি কিনবেন, কেন কিনবেন, কেনার পর তা কিভাবে সংরক্ষণ করবেন সেই বিষয়ে লিখেছেন শাম্মী এহসান।
যখন কাঁচাবাজারের লিস্ট করবেন, তখন তালিকার একদম সামনের সারিতে রাখবেন আস্ত কুমড়া, লাউ, কাঁচা কলা ও পেঁপে, কচুর মুখী, বড় কচু ও আলু। এগুলো আস্ত এবং ম্যাচিউরড দেখে (আলু, লাউ বাদে) কিনবেন। এগুলো ফ্রিজ ছাড়াই বাইরে অনায়াসে ১০/১৫ দিন ভালো থাকে। আর আস্ত কুমড়া তো মাসের পর মাস ভালো থাকে, কিছুই হয় না।
অবশ্য লাউটা ভালো দেখে কিনতে না পারলে এক সপ্তাহ পর শক্ত হতে শুরু করবে। তাতেও সমস্যা নেই। বীজ ফেলে দিয়ে কেটে টুকরো করে সিদ্ধ করুন। পানি ঝরিয়ে ডীপ ফ্রিজে রেখে দিন। এটি দিয়ে আপনি করতে পারেন কালোজিরার ফোড়নে লাউ ঘণ্ট বা লাউ ডাল অথবা চিংড়ি লাউ।
এরপরে লিস্টে রাখবেন পটল, বেগুন, উচ্ছে, ঢেঁড়স, লেবু, গাজর, ধুন্দল, টমেটো ইত্যাদি। এগুলোও নরমাল ফ্রিজে পনেরো দিনেও কিছু হয় না।
ফ্রিজে সবজির প্যাকেট ঘেমে যাচ্ছে কিনা, পানি জমেছে কিনা একটু খেয়াল রাখবেন। পানি দেখলেই শুকনো কাপড় দিয়ে প্যাকেট ও সবজি দুটোই সুন্দর করে মুছে আবার রেখে দিন।
তিন চার রকম শাক হলে ধুয়ে বেছে একটা আইটেম সেদিনই রান্না করে নিন। অনায়াসে দুই দিন খেতে পারেন রান্না করা শাক। বাকি শাক ভাপ দিয়ে বা পুরো সিদ্ধ করে পরিমাণ মতো বক্সে করে ফ্রিজের ডীপ রেখে দিন। এরপর প্রয়োজনে বের করে পেঁয়াজ, মরিচ ও একটু বেশি রসুন দিয়ে ফোড়ন দিন। বোঝাই যাবে না শাক নতুন, নাকি সিদ্ধ করে ফ্রিজে রাখা।
কাঁচামরিচ পানি ঝরিয়ে
কিছু পলিথিনে, কিছু মরিচ কাঁচের বয়ামে ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন থাকে। এছাড়া কাঁচামরিচ
বেটে বা ব্লেন্ড করে পরিমাণ মতো ছোট ছোট গোল বলের মত করে
কেটে বক্সে ভরে ফ্রিজের ডিপে রেখে দিন। এভাবেই রাখতে পারেন পুদিনা, অরিগ্যানো, ধনে
পাতা।
পুদিনার ডালগুলি না ফেলে ছায়াযুক্ত স্থানে একটা গ্লাস বা মগে ভিজিয়ে রাখুন, দুই/তিন দিন পরপর পানি পাল্টে দিন। দেখবেন নতুন পাতায় ভরে যাবে, শেকড় আসবে।
প্রতিদিন ভিটামিন সি খান পাল্টাপাল্টি করে। একদিন লেবু, একদিন আমলকি, একদিন কাঁচা আম। ভিটামিন সি শরীরে জমে থাকে না, তাই একদিনে অনেক বেশি ইনটেক না করে, অল্প খান, প্রতিদিন খান। পারলে খোসাও ভেতরের ছিলকা টেনে উঠিয়ে ডাল ভাতে, এমনি এমনি কিংবা মসলা চায়ে কুচি করে দিয়ে খেয়ে ফেলুন। চা একটু তেঁতো হবে, ভালোই হবে, তিতা খাওয়া ভালো।
আর সবজি কখনই সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোবেন না। শাক সব্জিতে অসংখ্য পোর থাকে। তাই পানি ছিটালে, পানি শুষে নিয়ে এরা সতেজ থাকে। সাবান পানি শাক সব্জির ভিতরে ঢোকানো কোন মতেই ঠিক হবে না।
তারচেয়ে বরং বালতিতে বেকিং সোডা বা কুসুম গরম পানির সাথে লবন অথবা ভিনেগার মেশান। বালতিতে সবজি পনেরো মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। উঠিয়ে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ঝুড়িতে বা একটু পুরু করে পেপার বিছিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
বাজার করার চেয়েও বাজার প্রসেসিং করা বেশি ঝামেলার এই মুহূর্তে। তাই সাশ্রয়ী হন, বেশি বেশি পদ না করে যা না করলেই না, ততটুকুই রান্না করুন।
সাবধান থাকুন। সচেতন থাকুন। ঘরে থাকুন।