করোনা ভাইরাস ও আদালত প্রসঙ্গ

0
789

রহমান মুস্তাফিজের মন্তব্য প্রতিবেদন : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যেই শিক্ষা প্রতষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এ জন্য কৃতজ্ঞতা সরকারের প্রতি। আজ আদালতের বিষয়টি নিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে ভাবলাম। ভাবতে হলো আসলে। অ্যাডভোকেট ইফতিসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললাম। সমাধানের পথ কেউ জানেন না। তবে তাদের সাথে কথা বলে নিজের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে কাটলো। পরিস্থিতি ভয়ানক। জানলাম, একজন জজ নিয়মিতই সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন। আজ একটু দেরি হবে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে ১১টার দিকে। কেন এই দেরি? বিচারক অস্ট্রেলিয়া থেকে ট্রেনিং শেষে ফিরেছেন ১৫ মার্চ। বুধবারই তার আদালতে বসার কথা। শেষ পর্যন্ত বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জানা গেল তিনি আসবেন না। দুপুর ১২টায় জানা গেল বিচারক হোমকোয়ারেন্টাইনে আছেন। শুধু এই একজন না। সারাদেশের ৩০ জন জেলা দায়রা জজ ও যুগ্ম দায়রা জজ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ট্রেনিংয়ে ছিলেন। তাদের সবাই এখন ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

আপাতত আদালত বন্ধ করার দরকার নেই। যে পরিমাণ মামলাজট তৈরি হয়েছে, তাতে আদালত বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে। তাই পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর নজর রেখে আদালত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। তার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সেটা কেমন হবে?

প্রধান বিচারপতি আজ বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে আদালত পূর্ণ বন্ধ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে বিচারপতিদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।কারণ হাজার হাজার, লাখ লাখ বিচারপ্রার্থী মানুষের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। কোর্ট পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হলে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। অনেকে জরুরি বিষয় নিয়ে আদালতে আসেন। সুতরাং এগুলো সামনে রেখে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

এমন পরিস্থিতিতে আমার ভাবনাটা এমন:

* নতুন আটক/গ্রেফতার হওয়া আসামীরাই শুধু কোর্টে আসবে। যে মামলার পক্ষদের আদালতে না আসলেই না, তেমন বাদী-বিবাদী কোর্টে আসবেন। অন্যান্য মামলার, বিশেষত সিভিল মামলার বাদী-বিবাদী কোন পক্ষেরই কোর্টে আসার দরকার নেই। তাদের পক্ষে প্রতি মামলায় একজন করে (অনেক মামলায় বাদী-বিবাদীর পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত থাকেন) আইনজীবী উপস্থিত থাকবেন। এতে আদালত কক্ষে স্বল্প সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় এটি হতে পারে প্রাথমিক পদক্ষেপ।

* পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভাবনা সামনে আসবে। তখন সব আদালত বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন শুধু একটি আদালত বসবে জরুরী/জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার জন্য। সপ্তাহে দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) বসবে বিশেষ আদালত। জামিনসহ অন্যান্য জরুরী মামলাগুলো চলবে সেই আদালতে। অনেকটা শীত ও গ্রীষ্মকালীণ অবকাশে আদালতের

* পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তখন আদালত পুরোপুরি-ই বন্ধ ঘোষণা হবে। আপীল বিভাগ, হাইকোর্ট, জজকোর্ট ও সিএমএম কোর্ট… সব আদালতের ক্ষেত্রেই এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যেতে পারে।