করোনা যুদ্ধে সেনাপতি সারার লড়াকু যোদ্ধা এলিসা

0
809
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিচ্ছেন এলিসা গ্রানাটা। ছবি: বিবিসি ওয়ার্ল্ড

সারা গিলবার্টের সাফল্যের জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্ব। সারা গিলবার্ট এর আগে আফ্রিকান ইবোলার ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। ফলে করোনা ভাইরাসের কবল থেকেও তিনি কোটি প্রাণ বাঁচাবেন বলেই আশা করছে বিশ্ববাসী। সারা ও তার টিমের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে এলিসা গ্রানাটার ওপর। এখন অপেক্ষার পালা। তবে সারা গিলবার্ট প্রত্যয়ী। বলেছেন, তার তৈরি ভ্যাকসিন কাজ করবে। রুখে দিবে করোনা ভাইরাসকে।

সারা গিলবার্ট

বৃহস্পতিবার সারা গিলবার্টের প্রত্যয়কে বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে এসেছেন এলিসা গ্রানাটা। ব্রিটিশ এই নারী গবেষক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিজের দেহে নিয়েছেন।

এলিসা বললেন, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে করোনার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের এই যুদ্ধ জয়ের প্রচেষ্টাতে সহযোদ্ধা হিসেবেই এগিয়ে এসেছি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বৃহস্পতিবার যে দুই জনের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছেন, এলিসা তাদের মধ্যে একজন। আগামী দিনগুলোতে আরও ৮০০ জনের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

অক্সফোর্ডের এই গবেষক টিমের প্রধান সারা গিলবার্ট দারুণ আশাবাদী ভ্যাকসিনটি নিয়ে। গণমাধ্যমকে বললেন, আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা আছে। আমি বিশ্বাস করি, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই প্রতিষেধক কাজ করবে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষকরা ChAdOx1 এবং ChAdOx2 নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন।

গবেষকরা ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়েসী সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের সন্ধান করেছেন, যারা এই ভ্যাকসিন নিজের দেহে গ্রহণ করবেন। যারা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন, তাদের দেয়া হবে ১৯০ থেকে ৬২৫ পাউন্ড পর্যন্ত। ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে তিন স্থানে। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, সাউদাম্পটনের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ও ব্রিস্টল চিলড্রেন্স ভ্যাকসিন সেন্টারে গিয়ে ভ্যাকসিন নেয়া যাবে।

গবেষকদের এই কাজে ব্রিটিশ সরকার সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে, এমনটাই জানালেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক।

হ্যানককের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, সরকার এই গবেষণা প্রকল্পটির জন্য ২০ মিলিয়ন পাউন্ড দিচ্ছে। এছাড়া ইম্পেরিয়াল কলেজের আরেকটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড।

সারা গিলবার্ট ও তার টিম মেম্বাররা বলছেন, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি হবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এর প্রথম ডোজই বাড়িয়ে দিবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে, ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর শরীরে সংক্রমণের কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

ভ্যাকসিনটি শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস-সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের জন্যও নিরাপদ।

ভ্যাকসিনটি প্রথম দফায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়েসী ৫১০ জনের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। প্রথম দফায় সফলতা পেলে দ্বিতীয় দফায় ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়েসীদের ওপর প্রয়োগ করা হবে। তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফায় ১৮ বছরের বেশি বয়েসী ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

দুনিয়াজুড়ে প্রায় ৮০টিরও বেশি গবেষক টিম কাজ করছে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে গত মাসে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। চীনের গবেষকরা জানিয়েছেন, তারাও করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

এছাড়া জার্মানির ‘বায়োঅ্যানটেক’ ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘ফাইজার’ যৌথভাবে করোনার একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। জার্মান সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই এটি ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়েসী ২০০ জনের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে।