বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এর মানে community spread হতে যাচ্ছে এবার। ইতোমধ্যেই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এই ক্ষেত্রে কি হবে আর কি করতে হবে তা জানা জরুরী। তৃতীয় পর্যায়ে কার, কিভাবে, কোথা থেকে, কার থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে তার খোঁজ পাওয়া সম্ভব না।
এ পর্যায়ে যা করতে হবে:
১. বয়স্কদের ভুলেও ঘরের বাইরে যেতে দেয়া যাবে না।
২. যেকোনো বয়সের শারীরিক ভাবে দুর্বল, ডায়াবেটিসের রোগী, হাইপারটেনশনের রোগী, কিডনি সমস্যা, লিভার সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা ইত্যাদি রোগীকে ভুলেও ঘরের বাইরে যেতে দেয়া যাবে না। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
৩. একেবারে বিশেষ দরকারে সুস্থ সবল তরুণ বা তরুণীকে যদি বের হতেই হয় তবে যে কোনো জানা/অজানা লোকের সাথে কম করে ৩ মিটার দূরত্ব (দেড় থেকে ৫ মিটার) বজায় রাখতেই হবে। ভীড় বা লোক জমায়েতে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
৪. যদি বাজার করার সময় ৩ মিটারের (কম করে দেড় মিটার) কম দূরত্বে কারও সাথে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে তবে সার্জিক্যাল মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। যদি হাসপাতালে কোনো কাজ থাকে অথবা বাড়িতে সন্দেহজনক কেউ থাকে তবে N-95/N-99/P-95 মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাইরে রাস্তা ঘাটে কোনো লোকজন না থাকলে বা ৩ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো লোকজন না থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলবে।
৫. বাজারে থাকাকালে এবং বাজার থেকে এসে নিজের নাক, মুখ, চোখ এমন কি কানেও হাত দেয়া যাবে না যতক্ষণ না সাবান দিয়ে ১ মিনিট ভালোভাবে ঘষে হাত ধোঁয়া না হচ্ছে।
৬. হাত ধোঁয়া শেষ হলে বাজারে ব্যবহৃত জামা-কাপড় ডিটারজেন্ট পাউডার গোলা পানিতে কম করে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর কাপড় ধুয়ে সাবান ব্যবহার করে গোসল করতে হবে।
৭. ঘরের মধ্যে কোনো কোভিড-১৯ রোগী বা সন্দেহজনক কেউ না থাকলে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
৮. গরম চা, গরম কফি, গরম পানি ৩০ মিনিট অন্তর অন্তর খেতে পারলে ভাল। গলার মধ্যে কিছু জমে আছে এমন মনে হলে গরম পানির সাথে লবন অথবা ভায়োডিন মাউথওয়াশ মিশিয়ে গড়গড়া করে নিলে ভালো হয়।
৯. ভাল ভাবে ধুয়ে ভিটামিন-সি যুক্ত ফল বেশী বেশী খাওয়া ভাল। ফলগুলো আধ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খাবেন। বাইরে থেকে আনা বিস্কুট, কেক ইত্যাদির যে কোনো প্যাকেট ব্যবহার এর আগে ধুয়ে নিতে হবে।
১০. ঘরের ভিতরে ঝাড়ু দেয়া যাবে না। বরং সরাসরি লাইজল জাতীয় ফ্লোর ক্লিনার দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। কোনোভাবেই ধুলো উড়তে দেয়া যাবে না।
১১. বাজারে/বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরের বাইরেই রাখতে হবে।
১২. যেহেতু বাংলাদেশ তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে তাই বাইরের যে কোনো ব্যক্তিকেই কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী ভাবুন এবং সেই মতো নিজেকে সচেতন রাখুন।
১৩. খবরের কাগজ, পার্শেল, কাজের লোক, বাইরের যে কোনো লোক ঘরে আসতে চাইলে সরাসরি না বলুন। কোনো খরব জানতে অনলাইন নিউজ পোর্টালে জানুন।
১৪. শুধুমাত্র ঘরে রান্না করা খাবার খান।
১৫. দয়া করে কোনো খাবার অপচয় বা নষ্ট করবেন না। বাসায় বাজার/তরিতরকারি যা আছে সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করুন।
১৬. ঠান্ডা খাবার/পানীয় সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করুন।
১৭. ঘর থেকে একদম বের না হওয়া হল সবচেয়ে উত্তম।
১৮. অযথা গুজব ছড়াবেন না। যা আপনি নিজে দেখেন নি তা শেয়ার করে প্যানিক ছড়াবেন না। মনে রাখবেন করোনায় আক্রান্ত মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়।
১৯. আমাদের যে জাতিগত সাহস এবং বীরত্বের পরিচয় আমরা যুগে যুগে দিয়েছি সেই সাহস সমমর্মিতা এবং বীরত্ব নিয়েই আমরা যাতে জেগে উঠতে পারি সেই জন্যে সবসময় পরস্পরের খোঁজ রাখুন, একে অন্যকে সাহস দিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই সময়ে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা হলে রাস্তার পাশের ফার্মেসিওয়ালা বা কোয়াকদের কাছ থেকে দেয়া কোনো ঔষধ সেবন করবেন না। কারণ, তাদের ম্যাক্সিমাম প্রেসক্রিপশনেই অ্যান্টিবায়োটিক /ব্যথার ঔষধ থাকে যা খেলে এখন হিতে বিপরীত হতে পারে। উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো হলে কাছের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন অথবা পরিচিত ডাক্তারের কাছ থেকে ফোনে পরামর্শ নিন। তিনি পরামর্শ দিলে ডাক্তারের কাছে যান।