চিকিৎসকের কাণ্ড

জীবিত শিশুকে দাফনের প্রস্তুতি

0
2045
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নবজাতক জান্নাতুল (বায়ে) এবং উপশম নাসিং হোমের লোকেশন

ডাক্তারের অপেশাদারিত্বে জীবন্ত শিশুর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা হচ্ছিল। সদ্যপ্রসূত শিশুকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলে তাকে ফেলে রাখা হয় ঠাণ্ডা মেঝেতে। এরপর দাফনের জন্য পলিথিনে মোড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এই সময় জানা গেল, নবজাতক জান্নাতুল জীবিত আছে।

রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদরের জিনিয়া খাতুনের প্রসব ব্যথ্যা শুরু হলে তাকে হাসপাতাল রোডের উপশম নার্সিং হোমে। গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই জিনিয়া বেসরকারি এই হাসপাতালের মালিক ডাক্তার জিন্নাতুল আরার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেখানেই ভোর ৪টার দিকে কন্যাশিশু প্রসব করেন জিনিয়া। আগে থেকেই তার নাম ঠিক করা হয়েছিল ডাক্তারের নামের সাথে মিল রেখে জান্নাতুল। জন্মের পর চিকিৎসক জানান, জান্নাতুল বেঁচে নেই।

হাসপাতালের আয়ারা শিশু জান্নাতুলকে ফ্লোরে শুইয়ে রাখে। তারপর তারা শিশুর মরদেহ পলিথিনে পেচানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

জিনিয়া জানান, ভোরে আমাকে জানানো হয় বাচ্চা মারা গেছে। এ খবর পরিবারের অন্যদের জানাই। মেয়েকে দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেন স্বামী ও স্বজনরা। এ সময় বাচ্চাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়।

জিনিয় বলেন, বিয়ের কয়েক বছর পর প্রথম সন্তানের জন্ম হলো। সেই বাচ্চা মারা গেছে। শেষ বারের মত একবার মেয়েকে কোলে নিয়ে দেখতে চাই। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে কোলে নেই। মেয়েকে কোলে নেয়ার পর সে নড়ে ওঠে। সাথে সাথে ডাক্তার জিন্নাতুল আরাকে খবর দেয়া হয়। আমি ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করলে পলিথিনে দম বন্ধ হয়ে মারা যেত আমার মেয়ে।

ডাক্তার জিন্নাতুল আরা শিশুর বেঁচে থাকার খবর পেয়ে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।

আজ সোমবার শিশু জান্নাতুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছে জান্নাতুল। সে এখন হাসছে, হাত-পা নাড়ছে। পিটপিট করে তাকাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসাদুর রহমান মালিক জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুটির জন্ম হয়েছে। তাই তাকে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আপাতত সে সুস্থ থাকলেও চূড়ান্তভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ডাক্তার জিন্নাতুল আরা গণমাধ্যমকে বলেন, চার ঘন্টা অক্রিজেন দেয়ার পর সে কিছুটা সুস্থ হলে সকালে আমরা তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেছি। তবে এই চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

কয়েক বছর আগে জেলার সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী আবদুল হালিমের সাথে বিয়ে হয় জিনিয়া খাতুনের। নিঃসন্তান ছিল তারা। গত বছরের মাঝামাঝিতে গর্ভবতী হন জিনিয়া।

ডাক্তার জিন্নাতুল আরা চুয়াডাঙ্গার প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপশম নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।