করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ইতোমধ্যে ৪ দফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলেও লকডাউন করা হয়নি। বিশেষ বিশেষ ভবন, এলাকা বা জেলাকে নেয়া লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পঞ্চম বারের মত সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা চলছে।
জনপ্রশাসন সচিব ইউসুফ হারুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক হয়নি তাই ছুটির মেয়াদ বাড়তে পারে। তার এই মন্তব্যের পর নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, পঞ্চম দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়বে।
জনপ্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির যে মেয়াদ চলছে তা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা হয় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে আরেক দফা ছুটির মেয়াদ বাড়ে। চতুর্থ দফায় সিদ্ধান্ত হয় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি থাকবে।
এই সময় জাতির উদ্দেশে দেয়া একাধিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোষণা করেন বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ। পরে নিম্ন আয়ের মানুষদের আর্থিক সহায়তা এবং চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরসহ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষের এপ্রিল ও মে মাসের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। একই সাথে সারা দেশে দিন মজুরসহ রিকশা-ভ্যান চালকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তালিকা করে খাবার ও অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের কারণে ধারণা করা হচ্ছে পঞ্চম দফায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়লেও কার্যত তা ঈদুল ফিতরের ছুটি পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ ঘটে যাওয়ায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ২৭ মে পর্যন্ত দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়তে পারে। ঈদুল ফিতরের ছুটির পর পরিস্থিতি ২৮ মে বৃহস্পতিবার অথবা ৩১ মে রোববার অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু চালু হতে পারে।
শনিবার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নিয়মিত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৪৪ জন, মারা গেছেন ৮৪ জন। প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেয়া হবে।
এছাড়া, শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্তিতি পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি নয়, সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সচেতন সমাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনাও শুরু হয়েছে।