ডাকসু জিএস’র দায়িত্ববোধ

দায়িত্ব নিলেন ছিন্নমূল মানুষ ও নিরীহ প্রাণীদের

0
674

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছিন্নমূল মানুষ ও বেওয়ালিশ প্রাণীদের।  তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সবাই। করোনা আতঙ্কের এই কালে তার কার্যক্রম নিয়ে আজও তিনি ফেসবুকে একটি পিাস্ট দিয়েছেন। যাতে তিনি প্রকাশ করেছেন মানুষ ও প্রাণীর প্রতি তার মায়া তৈরি হয়েছে শৈশব থেকে, মায়ের কাছ থেকে।

গোলাম রাব্বানী বিশ্বদ্যিালয় এলাকায় ব্যবস্থা করেছেন খাবারের, ছিন্নমূল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রির। এ নিয়ে আজ (শনিবার) ভোর ৫টায় তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন,

“ছোটবেলায় যখন কিছুটা বুঝতে ও বলতে শিখেছি, আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো, কখনো কাউকে গালি দিবা না, আঘাত করবা না। গালি দিলে জিহবায় ঘা হয়, আঘাত করলে পরে হাত-পা বাঁকা হয়ে যায়, আল্লাহ পাপ দেয়। আমি মন থেকেই সেগুলো বিশ্বাস করতাম, আর খেলার সময় বা স্কুলে কেউ গালি দিলে, মারামারি করলে তাদের এগুলো বলতাম।

খাবার সময় আম্মু বলতো, এক একটা ভাত ৭০ জন ফেরেস্তা অনেক কষ্ট করে বানায়। খাবার অপচয় করবা না। আজ অবধি আমি খাবার অপচয় করি না, কষ্ট হলেও প্লেটের শেষ খাবারটুকু খেয়ে ওঠার চেষ্টা করি। আশেপাশে থাকা কাউকে খাবার নষ্ট করতে দেই না।

আম্মু যখন বাড়িতে আসা ভিক্ষুককে চাল দিতো, বলতো গরীব মানুষকে কিছু দিলে আল্লাহ তাতে বরকত দেয়, পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আম্মু চাল দিয়ে চলে গেলে আমি ফের লুকিয়ে চালের হাড়ি থেকে আরো বেশি পরিমাণ চাল দিয়ে আসতাম, পরে আবার হাঁড়ির ঢাকনা খুলে দেখতাম, চালের পরিমাণ সত্যি বেড়েছে কিনা!

তারপর আম্মু বলতো, বাড়িতে মেহমান আসলে, তাদের খাওয়ালে, যত্ন করলে আল্লাহ খুব খুশী হয়। আমি মাঝে মধ্যেই বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে অপরিচিত কাউকে ‘আংকেল আমাদের বাসায় চলেন’ বলে হাত ধরে টেনে বাসায় নিয়ে আসতাম।

স্মৃতির পটে এমন আরো বহু মজার ঘটনা আছে আব্বু-আম্মুর সৌজন্যে।

মানুষ চলার পথে পারিপার্শ্বিকতা আর বিবেকবোধ থেকে যতটা শেখে, তার ঢের বেশি শেখে কাঁচা বয়সে পরিবার থেকে। এই পারিবারিক শিক্ষাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মধ্যে যে যৎসামান্য মানবিক গুণাবলি বিদ্যমান, তার প্রায় পুরোটাই আব্বু-আম্মুর থেকে হাতে-কলমে শেখা।

তাই, প্রতিটি বাবা-মা ও পরিবারের অগ্রজদের উচিত উচিত একদম ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের তার মতো করে বুঝিয়ে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা। নয়তো, অনাগত আগামীতে সন্তানের বেয়াদবি, অসৌজন্যতা, অপকর্মের জন্য বাবা-মাকেই কটুবাক্য শুনতে হয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ পথে পরিচালিত হবার তৌফিক দান করুক।

শুভ সকাল”।

এর আগে শুক্রবার বেলা ৩টা ৩৬ মিনিটে তিনি তার পেইজে ঘোষণা দিয়েছিলেন,

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, আবাসিক হলগুলোও ভ্যাকেন্ট; পুরো ক্যাম্পাস জনমানবহীন শূন্য প্রায়। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্যাম্পাস এলাকায় ফুল, চুড়ি, চকলেট বিক্রি করা, শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা-অনুকম্পায় পেট চালানো ছিন্নমূল পথশিশু, ওদের পরিবার ও বয়বৃদ্ধ মানুষগুলো।

ফাঁকা ক্যাম্পাসে তাদের ইনকাম সোর্স নেই, যাওয়ার ও খাওয়ার জায়গা নেই। আশেপাশের বস্তিঘর, ফুটপাত, হাইকোর্ট মাজার এলাকায় বসে তীর্থের কাকের মতো কারো মানবিক সাহায্যের পথ চেয়ে আছে।

আর মহাবিপদে আছে ক্যাম্পাস এবং বিভিন্ন হল আঙ্গিনার স্থানীয় বাসিন্দা, শ’খানেক কুকুর বিড়াল। ওদের একটু খাবার দেয়ার যে কেউ নাই! ক্ষুধার্ত হলেও ওরা চিরচেনা এই গন্ডি ছেড়ে যাবে না। দু’একজন মহৎপ্রাণ শিক্ষার্থী মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা ওদের জন্য কষ্টসাধ্য।

এসব ছিন্নমূল অসহায় মানুষ আর অবলা প্রাণীগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আজ রাতে তিন/চার দিন খেতে পারে এমন খাদ্যসামগ্রী এই মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপর প্রতি ৩/৪ দিন পর পর আবার।

আর প্রতিদিন ক্যাম্পাসের সকল কুকুর বিড়ালের খাবার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। প্রতিদিন ১০ কেজি মুরগী মধুর ক্যান্টিনে সিদ্ধ করে ওদের দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ ওরা আর অভুক্ত থাকবে নাহ।

ক্যাম্পাস খোলার আগ পর্যন্ত এভাবে চলবে…

সুহৃদগণ, এ মহতী উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করছি।”

জীবে দয়া করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

Posted by Golam Rabbani on Saturday, 28 March 2020

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ছিন্নমূল পথশিশু, তাদের পরিবার ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, সাবান ও মাস্ক বিতরণ।মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।চলবে…

Posted by Golam Rabbani on Friday, 27 March 2020