দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিপদ সংকেত

0
1100

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাশকৃত সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল (CAB) এবং এর আগে সেদেশের সর্বোচ্চ আদালতের অনুমোদিত নাগরিক তালিকাভুক্তির বিধান এক চরম সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সিপিবির সমাবেশে কমরেড সেলিম বলেন, ভারতের এই সাম্প্রদায়িক নাগরিকত্ব বিল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক মহাবিপদ। তিনি বলেন, ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমাদের নাক গলানোর অধিকার না থাকলেও বর্তমান মোদি সরকারের চরম হিন্দুত্ববাদী ভারত বানানোর যে পাঁয়তারা আজ শুরু হয়েছে। তা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। তাই এর বিরুদ্ধে ভারতের সংগ্রামী জনতার সাথে আমরা একাত্ম। তিনি বলেন, বৃটিশ সরকারও টিকে থাকার জন্য ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল। বর্তমানে বিজেপি সরকার ভারতের জনগণের উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসের সকল সাফল্য ও অর্জনকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে পুরো ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে।

ভারতের আন্দোলনরত জনগণের সঙ্গে সংহতি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে কমরেড সেলিম বলেন, জাতিসংঘ মোদি সরকারের এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের পরিপন্থী বলে ঘোষণা দিলেও আমাদের দেশের সরকার এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক ভারত আমাদের বন্ধু বটে কিন্তু মোদির সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার আমাদের বন্ধু হতে পারে না। আমাদের উভয় দেশের শোষিত মানুষের স্বপ্ন ও লড়াই এক।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলেও আমরা ৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করি। সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ নানা বিভাজন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। মানবতার দুশমন মোদি, বিজেপি, আরএসএস’র বিরুদ্ধে সকল মানবতাবাদীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি কন্দ্রেীয় কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী এবং ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, এ আইন খোদ ভারতেই ব্যাপক সমালোচিত। এই নাগরিকত্ব বিল যেহেতু বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তাই এই পরিস্থিতিতে সিপিবি নীরব দর্শকদের ভূমিকা পালন করতে পারে না। তাই এর প্রতিবাদ করা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক জনগণ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সিপিবি তাই এ বিলের নিন্দা জানাচ্ছে এবং একইসঙ্গে এই বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ভারতের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও কমিউনিস্ট শক্তির সংগ্রামের সাথে পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছে। সিপিবি ভারতে এই আন্দোলন করতে যেয়ে সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত বামপন্থী নেতা কমরেড ডি রাজা, কমরেড সিতারাম ইয়েচুরী এবং ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছে।

বক্তারা বলেন, এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাকিস্তানি ভাবধারায় তৈরি ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের’ হিন্দুত্ববাদী সংস্করণ। এর মাধ্যমে ভারতের বর্তমান সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার ধর্মীয় বিভেদকে চরমে নিয়ে যেতে চায়। এটি শুধুমাত্র ভারতের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকেই বিনষ্ট করবে না একই সঙ্গে এই দুই আইন পুরো এশিয়ার শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে। ফলে, বিভিন্ন দেশ এর সুযোগ নেবে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং সাম্রাজ্যবাদ। তাই সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অসাম্প্রদায়িক জনতাকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। # বিজ্ঞপ্তি।