পুলিশী কাণ্ডে নিরাপরাধ ছাত্র জেলে

0
1614
নিরাপরাধ শাহীন ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শাহীন। নিরাপরাধ শাহীন দুই মাস ধরে জেলে, অভিযুক্ত শাহীনকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

পুলিশের কল্যাণে হত্যাকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। অথচ তার নামের সাথে মিল থাকায় জেল খাটছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। রাজশাহী মহানগর পুলিশ দুই মাসেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পুলিশের অন্তর্বর্তীকালীণ প্রতিবেদনের অভাবে আদালতও নিরাপরাধ শিক্ষার্থীকে জামিন বা মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারছেন না।

জানা গেছে, যুবলীগ নেতা রাসেল হত্যাকাণ্ডের আসামি শাহীন আহাম্মেদ শাহীনের পরিবর্তে পুলিশ গ্রেফতার করে আরেক শাহীনকে। গ্রেফতার হওয়া শাহীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহীনুর রহমান শাহীনকে। পুলিশ তাদের ভুল (!) সংশোধনের কোন উদ্যোগ না নিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীর স্বজনদের।

জানা গেছে, রাজশাহী রেল ভবনে গেল বছরের ১৩ নভেম্বর ১৪ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে। নিজাম কাউন্সিলরের আশ্রিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিরোধের জেরে সুজন, শাহীন ও তাদের সহযোগীরা যুবলীগ নেতা রাসেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার ভাই বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাজাও আহত হন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর আহত রাসেল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

পুলিশ ঘটনা জানতে পেরে দ্রুতই অভিযানে বের হয়। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএসসি পরীক্ষার্থী মুজাহিদ ও কামালউদ্দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহীনসহ নিরাপরাধ ৭ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশী অভিযান শেষ হওয়ার পর গভীর রাতে নিহত যুবলীগ নেতা রাসেলের ভাই মনোয়ার হোসেন রনি চন্দ্রিমা থানায় এজাহার দায়ের করেন। ঘটনায় জড়িত না থাকায় এজাহারে এই তিন ছাত্রের নাম ছিল না। মামলার বাদী রনির অভিযোগ, এজাহারে নাম দেয়া না হলেও মামলা রেকর্ডের সময় পুলিশ নির্দোষ এই তিনজনকে আসামি করে।

মামলার বাদী মনোয়ার হোসেন রনি জানান, এজাহারে রাসেল হত্যার জন্য সুস্পষ্টভাবে শিরোইল কলোনি এলাকার ডাক্তার নাসিরের ছেলে শাহীন আহাম্মেদ শাহীনের নাম দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। বরং নূর মোহাম্মদ সরদারের ছেলে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র শাহীনুর রহমান শাহীনকেও আসামি করে। রনি বললেন, নিরাপরাধ শাহীন জেল খাটছেন, অথচ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি ৯ জনেরও কেউই।

বাদীর অভিযোগ, মূল আসামিরা নগরীর আশেপাশেই থাকে বলে আমরা শুনি, অথচ পুলিশ নাকি তাদের খুঁজে পায় না।

নিহত রাসেলের আরেক ভাই, আওয়ামী লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন রাজা জানান, যে শাহীন জেল খাটছেন সে শাহীন অপরাধী শাহীন নয়। পুলিশকে বারবার বলার পরও প্রকৃত অপরাধী শাহীন আহাম্মেদ শাহীনকে পুলিশ ধরতে পারেনি।

অন্য দিকে, কারাগারে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীনুর রহমান শাহীনের বাবা নূর মোহাম্মদ সরদার বলেন, ঘটনার দিন তার ছেলে রাজশাহীতেই ছিলেন না। সেই দিন মাস্টার্সের ফিল্ড ওয়ার্কের কাজে শাহীন সেদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছিলেন। কাজ শেষে রাজশাহী ফেরেন সন্ধ্যায়। এ সময় পুলিশ মহল্লার মোড়ে যাকে পেয়ে তাকেই তুলে নিয়ে গেছে।

নূর মোহাম্মদ জানান, বারবার থানায় ধর্ণা দিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশের ভুলে শাহীনের মত মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন জেলে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে, শাহীনুর রহমান শাহীনের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বলছেন, আদালতে সব প্রমাণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত পুলিশের কাছ থেকে একটি অন্তর্বর্তীকালীণ প্রতিবেদন চাইছেন। সেটি পেলেই শাহীনুর রহমান শাহীনের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। অথচ পুলিশ এই প্রতিবেদনটি আদালতে দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুম মুনীর দায় এড়াতে চাইছেন। তিনি বলছেন, ঘটনার সময় তিনি এ থানায় ছিলেন না। সম্প্রতি বদলি হয়ে এসেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও বদলি হয়ে গেছেন। তবে মামলার তদন্ত ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা বলে জানালেন সিরাজুম মুনীর।