রাজধানীর মগবাজার ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইফরান খান রাকিবের মৃত্যুরহস্য সাড়ে ৫ মাসে উৎঘাটিত হয়নি। পিবিআই’র তদন্তেও আশার আলো দেখছে না নিহতের পরিবার। নিহতের পরিবার তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রী র হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর খন্দকার গলির বাসিন্দা দীল মোহাম্মদ খান। তার একমাত্র ছেলে ১৭ বছর বয়েসী ইফরান খান রাকিব। গত ৬ জুলাই আনুমানিক রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে রাকিবের মৃত্যুর খবর পান তার মা। তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল থানা এবং হাতিরঝিল থানার রশি টানাটানিতে হত্যা মামালার এজাহার পরিবর্তন করে দুর্ঘটনা মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে বলে পরিবারটি দাবি করছে। মামলার বাদী দীল মোহাম্মদের আবেদনে ২ আগস্ট মহা-পুলিশ পরিদর্শক মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পি.বি.আই)-এ হস্তান্তর করেন। মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই’র মজিবর রহমান।
মামলার জট খোলার ব্যাপারে শংকিত বাদী। পরিবারের দাবি, ইফরান খান রাকিবকে তার বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। জয়, সাদী, রাফিন, সাবাব, রাজা ও আশিক পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গাড়ী দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে। নিহতের পিতা দিল মোহাম্মদ খান এ ব্যাপারে হাতিরঝিল থানায় ৭ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন ( মামলা নং ১০)। বাদির দাবি, পুলিশ সন্দেহভাজন খুনিদের বাদ দিয়ে শুধু রাফিদ নামক একজনকে আসামী করে মনগড়া ফরমায়েসী মামলা সাজিয়েছে। খুনের মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে গাড়ী দুর্ঘটনার নাটক সাজাতে শুরু থেকেই তৎপর পুলিশ।
গত ৬ জুলাই আনুমানিক রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে ইফরান খান রাকিব এর মা শিউলী বেগম তার ছেলের মুঠো ফোনে ফোন করলে অপর প্রাপ্ত থেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে একজন জানান, আপনার ছেলে গাড়ী এক্সিডেন্ট করে বিজি প্রেসের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। রাকিবের বাবা, মা ও আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থলে যেয়ে উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে পারেন, গাড়ীটি মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ভাঙা অবস্থায় দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাবার সময় তারা আটক করে। এ সময় গাড়ী থেকে দু’জন পালিয়ে যায়। অপর একজনকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার টহলরত গাড়ীর এএসআই জহিরুল ইসলামের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য একটি ছেলে আহত অবস্থায় পড়েছিল। তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে ফায়ার ম্যান এবং পুলিশ সদস্যরা তাকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যায়। ইফরানের বাবা, মা ও আত্মীয়রা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পৌঁছে তাকে মৃত দেখতে পান। তিনি ছেলের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রেখে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যেয়ে ধরা পরা যুবকের পরিচয় জানতে চান। তখন সে তেজগাঁও শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি। দীল মোহাম্মদ হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান আটক সাদী, তার অসংখ্য বন্ধু বান্ধব, মা বোনসহ অন্যদের। সাদী তাকে জানায়, তাদের বন্ধু জয় তাকে খুন করেছে। জয় তাদের দ্বারা হত্যা করাল কিনা জানতে চাইলে তখন সাদী মাথা নীচু করে বসে ছিল বলে জানান দীল মোহাম্মদ। সাদি জানায়, গাড়ীটি চালাচ্ছিল রাফিন। সাদীর মামা রানা নাসির তাদের সঙ্গে আর কথা বলতে না দিয়ে জোর করেই ইফরানের বাবাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন।
ইফরানের বাবা জানান, হত্যা মামলা করতে তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “মামলার ড্রাফট করা হয়েছিল। ওসি আলী হোসেন এবং এসি সালমান ১৭ ঘন্টা পর মামলা হাতিরঝিল থানায় করার পরামর্শ দেন। হাতিরঝিল থানা পুলিশ হত্যাকারীদের বাঁচাতেই মামলার এজাহার পরিবর্তন করে কৌশলে বাদী দীল মোহাম্মদের স্বাক্ষর নিয়েছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অনাথ মিত্র দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির কোন ফরেনসিক পরীক্ষা করেননি। গাড়ীর অনেক আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ফ্লাইওভার এবং রাস্তার পাশের কোন সিসি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেনি। এমনকি ইফরানের দুইটি মোবাইল সেটের সমস্ত আলামত নষ্ট করে দিয়েছে মামলাটি ধামাচাপা দিতে।”
তিনি বলেন, ইফরান মারা গেল রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। অথচ জামিল হায়দার তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাত ৮টা ২৩ মিনিটে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘ইফরান না ফেরার দেশে চলে গেছে’… পুশিল এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখেনি। এমন কি জয়, সাবাব, মোবিন- তারা অধরাই রয়ে গেলেন। পিবিআই’র তদন্তে বাদী হতাশ। বাদী দিল মোহাম্মদ নিশ্চিত তাহার ছেলেকে খুন করে গাড়ী এক্সিডেন্টের নাটক সাজানো হয়েছে। কেননা শুধু ইফরানই মারা গেল আর গাড়ীর একজন যাত্রী সামান্যতম আঘাতপ্রাপ্তও হল না।