আজকের সূর্যাস্তের সাথে সাথে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। বিদায় নিল ২০১৯ সাল। আজ রাত ১২টায় শুরু হবে নতুন বছর, ২০২০ সাল। সকালে দেখা মিলবে নতুন বছরের প্রথম সূর্য।
গেল বছরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গণে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল ঘটনাবহুল একটি বছর।
বছরের শুরুতেই শপথ নেয় নতুন সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ৭ জানুয়ারি। অনেক নাটকীয়তার পর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন বিএনপি ও গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা।
তবে বছরটিতে সবচেয়ে বড়ো দুঃসংবাদটি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকার বিষয়টি। ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকাটি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাতিল করা হয়।
পুরো বছরজুড়েই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে মাঠে থাকার চেষ্টা করে বিএনটি ও তাদের ২০ দলীয় জোট।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের মতই আলোচনায় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বারবার আশ্রয় নেয় কূটকৌশলের। বছরের শেষভাগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হয় মিয়ানমার নেত্রী অং সান সূ চি ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।
রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য নেদারল্যান্ডসে বিচারের কাঠগোড়ায় দাড়ায় মিয়ানমার। মামলাটির বাদী ওআইসি সদস্য গাম্বিয়া।
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উত্তাল ছিল ভারত। ভারতের গণবিরোধী এই আইনের বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসে। নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। এই আইন ও আন্দোলনের আঁচ লাগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও।
নাগরিকত্ব আইনের প্রভাবে বিজেপির হাতছাড়া হয়ে যায় তিনটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলোর নির্বাচনে সংখ্যাঘরিষ্ঠতা পায় রাজ্যভিত্তিক গড়ে ওঠা কংগ্রেস জোট।
বছরের শেষ ভাগে সারা দুনিয়ায় দেখা দেয় পেঁয়াজ সংকট। বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। এক মাসের ব্যবধানে ৪০ টাকার পেঁয়াজ দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২শ’ ৬০ টাকায়। তুরস্ক, মিশর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ এনে সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। এই সময় ভারতও ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের (ভারত) বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বিদায়ী বছরে দেশের আরেক আলোচিত চরিত্র ছিল ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। ওই সময়ে সমালোচিত হয় বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সুযোগ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত সরকার রক্ত পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়। ১২শ’ টাকার চার্জ্য নেমে আসে ৪শ’ টাকায়।
ফেনীতে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ও কিশোর আলো পত্রিকার অনুষ্ঠানে আবরারের মৃত্যুর ঘটনা ছিল আলোচনায়।
বছরের বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক আলোচনায় এসেছে শেয়ার বাজার।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে না পারার সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এছাড়া পদ্মাসেতুর তিন কিলোমিটার দৃশ্যমাণ হয়েছে ইতোমধ্যেই। সেতুর মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে ২০তম স্প্যান বসেছে বছরের শেষ দিনে।
২০১৯ সালটি ছিল গুজবের বছর। নানা ইস্যুতেই গুজব ছড়িয়েছে। তবে সব গুজবই থেমে যায় কয়েকদিনের মধ্যেই।