করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িতরা। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যখাতের সাথে জড়িত চার শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে। মারা গেছেন একজন চিকিৎসক। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা কাজে যারা জড়িত তাদের সুরক্ষা পোষাক বা সরঞ্জাম ছিল না শুরু থেকে। এখন অনেকটাই গুছিয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেয়া হচ্ছে পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম। তবে এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সরঞ্জাম N95 মাস্ক নিয়ে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে N95 মাস্ক নেয়া হয়েছে সেগুলো চাহিদা মাফিক মাস্ক নয়। তিনি জানান, এগুলো ভুল করে এসেছে। এই ভুল করে পাওয়া N95 মাস্ক নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন অ্যাডভোকেট অরণ্য রেজা ও মহসিন সৈকত।
অ্যাডভোকেট অরণ্য রেজা লিখেছেন:

“ভুল সত্যি না হলে আইনের আওতায় নিন এটেম্প টু জেনোসাইড এর মামলা দিন।
খুনিরাও তো আদালতে বিচারকের কাছে কর জোরে বলে থাকে, বুঝতে পারি নাই স্যার।ভুল হয়ে গেছে।মাফ করে দিন।
এরাতো মাফও চাই নাই। কেবল ভুলে হয়েছে বলছে।
ঠিক আছে ভুলে নকল মাল ভুল বাক্সে প্যাকেজিং হয়েছে বুঝলাম। কিন্তু ব্রান্ডের লেবেল তাদের কাছে কীভাবে এলো? আর তাদের প্রোডাক্ট কীসের ভিত্তিতে কোন মানদণ্ডে তৈরি হয়েছিলো? খতিয়ে দেখুন তারা আসলে কাদের থেকে কী কাজের আদেশ পেয়েছিলো? যদি আমেরিকার N95-এর অর্ডার পেয়ে থাকে তবে সেই মানের প্রডাক্ট কোথায়?
আর যদি নিজেদের মতই প্রডাক্ট করার মৌখিক আদেশ থাকে তবে তার স্যাম্পলের সাথে অনুমোদিত ইন্সপেকশন দলের ছাড়পত্র যাচাই করে দেখা হোক।
সেক্ষেত্রে নিশ্চয় দুই ধরনের দরপত্র বা কস্টিং দেখাতে তারা সামর্থ্য হবে।
আর না হলে, শিরোনামে ফিরুন। কার্যকর করুন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “মামলা আরো অনেক দেয়ার সুযোগ আছে। ভুলটা যে ভুল নয় তার প্রমাণ ওদের বিভিন্ন সময়ে বলা ফুটেজ থেকে কোট করেই মামলা রুজু করা যায়। জনস্বার্থে রিট করবার মত যথেষ্ট উপাদান আছে। ওদের সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট করবার যুক্তিও হাতে আছে। এমন একটি প্রকাশ্য চুরি ও জালিয়াতি নিয়ে ন্যাক্কারজনক ভুলের ধোপে ফেলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা রাখে কীভাবে দলীয় মানুষ, সে বিষয়টি আমাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে।
যারা জানে না ওদের জন্যে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছি:
আমেরিকার প্রডাক্ট N95 আমদানির কথা বলা হয়েছে।
যদি আমেরিকার কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে ঢাকাতেই তা তৈরির কথা বলে থাকে, তবে যেগুলো ব্রান্ডের নামে কার্টুনে ভরা হয়েছে প্রত্যেকটি জায়গা থেকেই তা নকল হিসাবেই অভিষিক্ত হয়েছে।
যদি আমদানির কথা হয়ে থাকে তবে ভুলের কথা অবান্তর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের থেকেও ভুল বলে সাফাই দেয়া হয়েছে।
আমার অনেক দলান্ধ ডাঃ বন্ধুকে
দেখেছি তাদের প্রিয় পরিচালককে সম্মানের সাথে সাংবাদিকেরা নাম উচ্চারণ না করা বা ছাপানোতে
সংক্ষুব্ধ হয়ে ফাটিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ঘটনা আলোয় আসার পরে সেই সব বন্ধুরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
এখন স্বয়ং স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ঐ মাস্ক কেবল আমেরিকা তৈরি করে। যা তাদের দেশেও সংকটে। এবং বিশ্বের অন্য কোথাও সাপ্লাই নেই।
এসব তদন্তে গেলে বেরিয়ে আসবে, এত জানার পরেও অধিদফতর কেন ভুলের সাথে সুর মিলিয়ে চেপে চলেছে?
এই ব্যাপারে আমার অর্ধেক কোন কথা নেই। একটাই পূর্ণাংগ দাবি, এত বড় জঘন্য রাষ্ট্রবিরোধী পদক্ষেপ, প্রতারণা, জালিয়াতি, রাষ্ট্রের ও জনগণের জীবন বিনাশী প্রচেষ্টার সাথে জড়িত ঘটনার তদন্ত করা হোক। ভুলের নামে চেপে যাওয়াকে আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারবো না।
আবার কবি মহসীন সৈকত তার মুক্তমতে লিখেছেন,
“সমাজ কি বলবে… এ প্রশ্নটা করে যে সমাজকেই মাঝে মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছি কারণ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রকের অজানা ইশারায় অনেক সময় সমাজের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। সমাজ বলতে চাইলেও বলতে দেয়া হয় না।
একটা দেশের বা পুরো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা নির্ধারণে সকল দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর উপরে বর্তায়। কেননা প্রধানমন্ত্রী তার যাচাইবিহীন নির্ধারিত সাংসদ, মন্ত্রী কিংবা আমলাদের যথাস্থানে নিয়োগের পর যে তার সকল দায়দায়িত্ব শেষ, তা কিন্তু নয়। জবাবদিহি মূলক ব্যবস্থার নীতি কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করলে হয়তো অনৈতিক অমানবিক কার্যকলাপকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।
তাছাড়া চোর, জোচ্চর, বাটপার, ভূমিদস্যু, দালাল কিংবা ব্যাংক লুটকারীদের মতো অমানুষকে যদি দেশ পরিচালনার জন্য মহান সংসদে তুলে আনেন তাহলে তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা মোটেই কাম্য নয়। ♦
✔ এবার আলোচ্য বিষয়ে আসি।
একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারই হবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমনটাই হওয়া উচিত এবং আমরা তাই আশা করি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি কথা খুব আলোচিত হচ্ছে। অনেকে লিখছেন, ‘বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন, রিয়েল এস্টেট ও ইনস্যুরেন্স ব্যবসায়ী। যার কিনা স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোন জ্ঞানই নাই। তো এরকম একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দ্বারা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নতো সম্ভবই নয়। আর দেশের মানুষের কি অসাধ্য সাধন করবেন তা একমাত্র উনি আর আল্লাহই জানেন।’
✔✔ অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুই জন মানুষের ছেলে, দুজন মিলে করোনায় আতংকিত অসহায় মানুষদের জন্য নকল N95 মাস্ক মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় বানিয়ে, ভুয়া আমদানি দেখিয়ে তা অখ্যাত প্রতিষ্ঠান JMI গ্রুপকে দিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করিয়ে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
কিন্তু ধরা খেলে অখ্যাত বানানো প্রতিষ্ঠান JMI কেই হিসেব অনুযায়ী ধরতে হয়। অথচ এই দুই নম্বরী ধান্ধাবাজি ব্যবসার পিছনে ছিলেন অন্য দুই জন। তারা হয়তো ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যাবেন, এমনটাই বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
গণমাধ্যমও বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারবেন না কেননা তার অজানা নয় এই ব্যবসার ইতিকথা। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রতিদিনকার ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক সাংবাদিকদের প্রশ্নের দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, এটা ভুল করে হয়ে গেছে।
এমন ভুলের দায় এড়ানো কি সম্ভব?
✔✔✔ এই দুই নম্বর N95 মাস্ক অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি বলে তাদের কাউকে কাউকে স্ট্যান্ড রিলিজ পর্যন্ত করা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তাদের মধ্যে একজন।
✔✔✔✔ নকল N95 মাস্কের জন্যই আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা এবং তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছে জনগণ।
মানুষকে হত্যা করে চলছে রমরমা মরণ ঘাতক ব্যবসা, নকল N95 মাস্ক।
♦ মানুষ মানুষের জন্যে। তাই
আসুন, এবার ভাবি আমাদের কি করার আছে।
এদের বিরুদ্ধে মানুষের কোনো ক্ষোভ নেই, সমস্ত ক্ষোভ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।
তাহলে এবার বলুন – ‘সমাজ কি বলবে’? এর দারভার কে নিবে? ♦
মহসিন সৈকতের লেখার তথ্যসূত্র:
২) https://www.prothomalo.com/…/1…/%E0%A6%93%E0%A6%AA%E0%A6%B0…