জেলায় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দারিদ্র্য কল্যাণ সংস্থা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষে বছরজুড়ে “মানবতার জানালা” নামের কর্মসূচি চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির স্লোগান “ডাক্তার এসেছে বাড়িতে, চিকিৎসা নিবো ফ্রি-তে”। গত ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজ সেবা দিবসে বিপুলসংখ্যক রোগীকে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে কর্মসূচীটি শুরু করা হয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ফ্রি ডাক্তার ক্যাম্পিং-এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। বাসস।
সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক দরিদ্র পরিবারের নারী-পুরুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্র চালু করেছে শহরের মোলানী পাড়া এলাকায়। সেখানে সপ্তাহে ১ দিন ফ্রি এবং অন্যান্য দিনে সামান্য ফি-এর বিনিময়ে দক্ষ ফিজিও থেরাপিস্ট আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল পরিবারের ৮০ বছর বয়সী মকবুল হোসেন বলেন, “এক পা ভাঙা, শরীরে প্রচুর ব্যথা, এলার্জি… সব মিলে ভালো নেই, এখানে ফ্রি চিকিৎসা নিতে পেরে ভালো লাগছে, অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছি না অনেক দিন ধরে।’
কথা হয় ৫০ বছর বয়সী মালেকা বানুর সাথে, তিনিও এসেছেন চিকিৎসা নিতে। ৪০ বছর বয়সী এঞ্জিনা বেগম কোলে ছোট্ট শিশু, সাথে বড় ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইব্রাহীমকেও নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখাতে। স্বামী কৃষি শ্রমিক। পরিবারে আয় রোজগার খুবই কম, তাই রিকশা ভ্যান ভাড়া দিয়ে শহরের আধুনিক সদর হাসপাতালে আসা তার পক্ষে কষ্টকর, বাড়ির পাশে ফ্রি ডাক্তার পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি।
স্বামী হারা মরিয়ম (৮০) এসেছেন তার মাথা ঘোরা-সহ কত রোগ বাসা বেধেছে শরীরে শেষ নেই, কিন্তু কি করবেন অর্থ সংকটে চিকিৎসা নিতে পারছেন না, ফ্রি ডাক্তার দেখানো হবে খবর শুনেই এসেছেন চিকিৎসা নিতে।
এভাবেই বিপুলসংখ্যক দরিদ্র
পরিবারের মানুষ আসছে চিকিৎসা সেবা নিতে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক
সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকসহ অন্যান্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের
সামনে বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শ ও বাস্তব বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। সংগঠনটি প্রান্তিক এ
জনগোষ্ঠীকে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে।
সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ
জালাল বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বছরব্যাপী মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জেলার প্রত্যন্ত
এলাকায় ঘুরে ঘুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাবো। চিকিৎসা মানুষের
মৌলিক অধিকার সমাজের পিছিয়ে পড়া এসকল নি¤œআয়ের মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান
করতে না পারলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে
সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দীর্ঘ
দুই যুগ ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত কি পেলাম সেটা বড় নয়, কি দিলাম সেটাই বড়।
গত ২ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১০ টি প্রত্যন্ত এলাকায় ক্যাম্পিং করেছি। এ কর্মসূচি
বছরব্যাপী চালু থাকবে।
সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: নুরুজ্জামান ভীষণ খুশি তিনি প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার ফ্রি ক্যাম্পিং তার এলাকায় চালু রাখার অনুরোধ করেন। জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. মাসুম আলী গত ১৩ জানুয়ারি সদর উপজেলার শেখের হাট উচ্চ বিদ্যালয় ফ্রি ডাক্তার ক্যাম্পিং পরিদর্শন শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সে সময় তিনি বলেন, দারিদ্র কল্যাণ সংস্থা মুজিব বর্ষে উদাহরণ সৃষ্টি করছে।