স্বাস্থ্যসেবার দুই শতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত

রহমান মুস্তাফিজের মন্তব্য প্রতিবেদন: সারা দেশে চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত দুই শতাধিক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণির স্টাফ ও ফার্মাসিস্টরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর ৮ জন স্টাফও রয়েছেন।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত সারা দেশে ৬৭ জন চিকিৎসক, ৫২ জন নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ১০ থেকে ১২ জন টেকনোলজিস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত এই মানুষেরা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজেরে সহকারি অধ্যাপক ডাক্তার মঈনুদ্দীন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের সময়মত পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ না করায় তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, পরে পিপিই সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এখনও অনেকেই পিপিই পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার যাদের পিপিই দেয়া হয়েছে, তাদেরও একটি করে পিপিই দেয়া হয়েছে। যা পরে তারা দিনের পর দিন ডিউটি দিচ্ছে।

পিপিই যাদের দেয়া হয়েছে তাদেরও ব্যবহারের নিয়ম জানানো হয়নি। ফলে অনেক স্বাস্থ্যকর্মীই সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না।

সবচেয়ে ভয়ের কথা হচ্ছে, চিকিৎসাসেবার সাথে জড়িত আরও অনেকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, অনেক রোগীই চিকিৎসকের কাছে রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ গোপন করছেন। এই রোগীদের অসচেতনতার কারণেই দেশে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

অসচেতন এসব মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তথ্য গোপন করে নিজের জীবনও বিপন্ন করেছেন। একই সাথে ঝুঁকিতে ফেলেছেন পরিবারের অন্য সদস্য এবং চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা যেহেতু প্রতিদিন অনেক রোগরি সংস্পর্শে যান, সে কারণে চিকিৎসকের মাধ্যমে অন্য রোগী ও তাদের পরিবারকেও সংক্রমণের ঝুঁকিতে পরতে হচ্ছে।

সরকার সারা দেশকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। প্রতিদিন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত মানুষদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর এখনও প্রস্তুত হয়নি।

চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের পিপিই সঙ্কটের পাশাপাশি মাস্ক সঙ্কটও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মাস্ক পরেই দায়িত্ব পালন করছেন ডাক্তার, নার্স, নমুনা সংগ্রহকারীসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অথচ তাদের জন্য এন৯৫ মাস্ত জরুরী।

সচিবালয়ের কর্মকর্তারা পিপিই পরে ফটো সেশন করেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। অথচ চিকিৎসাসেবায় জড়িতরা পিপিই পান না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কোন গণমাধ্যমকর্মীর ছবিও দেখা গেছে পিপিই পরা অবস্থায় ফটোসেশন করছেন। তিনি ডেস্ক ওয়ার্ক করছেন। বাইরে কোথাও যাচ্ছেন না। তার সুরক্ষা প্রয়োজন আছে স্বীকার করেই বলতে হয়, ডেস্কওয়ার্কে থাকা ব্যক্তির চেয়ে যেই রিপোর্টার বা ক্যামেরাপারসন অ্যাসাইনমেন্টে বাইরে যাচ্ছেন পিপিই তার বেশি দরকার।

গণমাধ্যমকর্মীদের মত সমাজের সবচেয়ে সচেতন অংশের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে বাকিদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, কোন হাসপাতালে যখন পিপিই পৌঁছানো হয়েছে, তখন সেই হাসপাতালের কর্তা ব্যক্তিরা আগে নিজেরা পিপিই নিয়েছেন। তারপর যা বেচেছে সেগুলোই ডাক্তার, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।

১৭ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত দেশে মোট ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৩৮ জন। এ সংখ্যা আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে। তবে এই বাড়ানোর হার কমানোর সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। মানুষকে করোনাকালের সব নির্দেশনা মানতে হবে। একই সাথে ডাক্তার, নার্স, নমুনা সংগ্রহকারীসহ চিকিৎসাসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুরক্ষিত করতে হবে।

একই সাথে সচেতন হতে হবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সম্পর্কেও। এই রোগগুলোর মৌসুমও শুরু হয়েছে। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া… তিনটি রোগের লক্ষণ প্রায় একই। ফলে এখনই চূড়ান্ত পর্যায়ের সাবধানতা প্রয়োজন।