করোনা ভাইরাসে কেউ মারা গেলে তার শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই করোনা ভাইরাসের কারণে কেউ মারা গেলে তার শেষকৃত্যও করতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা গোসল করানো যাবে না। এমনকি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া মরদেহ ছোঁয়াও যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন বা সৎকার বিষয়ে নির্দেশনা তৈরি করেছে। এই নির্দেশনায় হাসপাতাল বা বাড়ি থেকে মরদেহ সংগ্রহ, পরিবহন, দাফনসহ প্রতিটি পর্যায়ের বর্ণনা রয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা সন্দেহভাজন কেউ মারা গেলে মরদেহ সরানো, দাফন বা সৎকার শুরুর আগে অবশ্যই আইইডিসিআর’কে জানাতে হবে। আইইডিসিআর’র নির্দেশনা অনুযায়ী চার সদস্যের একটি দল সুরক্ষা পোষাক পরে মরদেহ দাফন বা স*কারের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মরদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। চার জনের যে দল, তার নেতা মৃত ব্যক্তির পরিবারের নির্দিষ্ট কোন অনুরোধ থাকলে জেনে নিবেন। কোথায় কবর দিবেন তাও ঠিক করে রাখতে হবে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহ গোসল করানো যাবে না। তবে পরিবার অনুরোধ করলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম বা পানি ছাড়া অজু করানো যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড় ব্যবহারের অনুরোধ থাকলে তা রক্ষা করতে হবে। তবে তা ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন তাদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে।
শেষকৃত্য সম্পর্কে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মরদেহের নাক, কান, গলাসহ সব ছিদ্রপথ তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে যাতে কোন তরল গড়িয়ে না পড়ে। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে মরদেহ সমাধিস্থানে নিয়ে যেতে হবে।
পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সম্পর্কেও রয়েছে নির্দেশনা। বলা হয়েছে, যাত্রাকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মরদেহ দাফন পরিচালনাকারী দলের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরিবহনের গাড়িতে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক কাচ বা প্লাস্টিকের পার্টিশন থাকতে হবে, যা চালক ও পরিবহন কামরাকে পৃথক করবে। পরিবহনের পর গাড়িটিকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। গাড়িকে জীবাণুমুক্ত করার কর্মীকে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। দাফনের সময় কোনভাবেই মরদেহ বহনকারী ব্যাগটি খোলা যাবে না।
কবর বা সমাধিস্থান সম্পর্কে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্থানটিকে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি আশপাশে উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও, মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন সেই স্থানটিকেও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মরদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনায় সন্দেহভাজন কেউ মারা গেলে একই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করলে সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এসে মৃত ব্যক্তির মুখের লালার নমুনা নিয়ে নিশ্চিত করবেন তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মরদেহ কোন অবস্থাতেই ময়নাতদন্ত করা যাবে না।
মরদেহ পোড়ালে দেহাবশেষ বা ছাই থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।