সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন

0
1321

বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সঙ্গীত জগতের অনন্য নক্ষত্র সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন আজ। বেশ কয়েকটি কালজয়ী গানেরও অনন্য স্রষ্টা তিনি। ক্ষণজন্মা এ মানুষটির জন্মদিনে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি জন্ম নেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে। বাবা গোপাল চৌধুরী ও মা প্রভাষিণী চৌধুরী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম।

হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন বকশী বাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউটে। ১৯৭৮ সালে তিনি এিএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইিএসসি পরীক্ষাতেও স্থান করে নেন মেধা তালিকায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন গণিত বিভাগে। পরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্ন্ন করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে।

শিক্ষা জীবনেই জড়িয়ে পরেন সক্রিয় রাজনীতিতে। একদিকে সঙ্গীতের সাধনা, অন্যদিকে রাজপথের ঝাঝালো মিছিল। স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী সঞ্জীব চৌধুরী গান বাঁধতেন আর তা সংস্কৃতি সংসদের বন্ধুদের নিয়ে গাইতেন। উজ্জীবিত করতেন দ্রোহের মিছিল।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার লেখা ‘রাশপ্রিন্ট’ ব্যাপক সমাদৃত হয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে। লিখলেন, “ওরা বলে, ঐ গাড়িতে করে আমাদের জন্য খাদ্য আর পানীয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন বন্ধুগণ, আমি জানি ঐ গাড়িতে আমাদের জন্য কোন খাদ্য ছিল না, আমাদের জন্য কোন পানীয় ছিল না। ৩০০ লাশ…। ৩০০টি লাশ ঠাণ্ডা, হিম! যাদের গুম করে ফেলা হবে। আমি বলতে চেয়েছিলাম সেই সত্য কথা। আর তখনই আমার দিকে ধেয়ে এগিয়ে আসে উদ্ধত রাইফেল। আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্ধত বেয়নেট। ওরা বলে, খামোশ…। তবুও বন্ধুগণ, আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই…।”

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই সঞ্জীব চৌধুরী যুক্ত হন সাংবাদিকতার সাথে। কাজ করেছেন দৈনিক আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায় দিন পত্রিকায়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে লিখতেন কয়েকটি সাপ্তাহিক কাগজে। আজকের কাগজ পত্রিকায় ‘ইথার থেকে’ ছিল তার অনবদ্য সৃষ্টি। দেশ-বিদেশের রেডিও-র সংবাদের ট্রান্সক্রিপশন করে ছোট ছোট নিউজ করতেন তিনি। ভোরের কাগজ পত্রিকা ফিচারকে জনপ্রিয় করে তোলে। বাংলাদেশে সংবাদপত্র জগতে ফিচারের এই নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নেয়ার পিছনের কারিগর সঞ্জীব চৌধুরীসহ কয়েকজন।

ভোরের কাগজের ফিচার এডিটর থাকা অবস্থায় সঞ্জীব চৌধুরী যান সিলেটে। সেখানেই এক অনুষ্ঠানে শাহ আবদুল করিম গাইলেন ‘গাড়ি চলে না’ গানটি। ঢাকায় ফিরে সঞ্জীব চৌধুরী সেই গানটি সংগ্রহ করে বাপ্পা মজুমদারকে দিয়ে নতুন করে সুরারোপ করালেন। গানটি এরপর প্রচারিত হয় জনপ্রিয় ম্যাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’-তে। তুমুল জনপ্রিয়তার পাশাপাশি শাহ আবদুল করিম ও দলছুট ব্যাণ্ডের কথা ছড়িয়ে যায় সারাদেশে।

সংস্কৃতি সংসদের ভোকাল সঞ্জীব চৌধুরী, অরণি শিল্পী গোষ্ঠীর ভোকাল বাপ্পা মজুমদার ও মন্দিরার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ব্যাণ্ড দল) ভোকাল মিঠু যার যার দল ছেড়ে এসে গড়ে তুললেন ‘দলছুট’। দলছুট গেয়েছে মানবতার গান, জীবনের গান। সঞ্জীব চৌধুরীর জীবদ্দশায় দলছুটের ব্যানারে প্রকাশ পায় ৪টি অ্যালবাম। এইসব অ্যালবামের অধিকাংশের গীতিকার ছিলে সঞ্জীব চৌধুরী। কোন কোন গানে তিনি সুরও দিয়েছেন।

বাইলেটারেল সেরিব্রাল স্কিম স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী।২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ নভেম্বর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন একমাত্র মেয়ে কিংবদন্তীর মায়া ছেড়ে।