দুই মাসের ব্যাংক ঋণের সুদ মাফ

0
531
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে দেশব্যাপী বন্ধের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এ পর্যন্ত ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। আর এটা নিয়ে হলো ১৯ নম্বর প্যাকেজ। যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে, যে সুদের পরিমান ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি ৪৯ কোটি।

স্থগিত সুদের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। ফলে, আনুপাতিক হারে ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের আর তা পরিশোধ করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি নতুন এই প্যাকেজ দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের জন্য আমরা বলেছি, এই দু’মাস যেহেতু সবকিছু বন্ধ তাই ঋণের সুদ টানার প্রয়োজন হবে না। সেখানে তাদেরকে আমরা কিছু সুযোগ সুবিধা দেব।

ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের ঋণের দায়মুক্তিই সরকারের নতুন প্রণোদনার উদ্দেশ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুদের যে অবশিষ্ট অর্থ সেটা ১২টি মাসিক কিস্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ গ্রহিতাগণ পরিশোধ করবেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যে সুদটা প্রতিমাসে দিতে হতো এই দুই মাস যেহেতু দিতে পারেনি, তাই, আমরা সেটার জন্য ১২ মাসের একটা সময় দিয়ে দিচ্ছি। যাতে এই ১২ মাসে ধীরে ধীরে তারা বাকীটা শোধ করতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের এই ২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রদানের ফলে, প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণ গ্রহিতা, যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা সরাসরি উপকার পাবেন। তারা কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ থাকা ব্যবসা-বাণিজ্য বা দোকান-পাট পুণরায় চালুর সুযোগ পাবেন।

তিনি বলেন, এই ১৯টি প্রণোদণা প্যাকেজের মোট পরিমান দাঁড়ালো এক লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ যা ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমান এবং জিপিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

এর বাইরেও মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উসব ঈদুল ফিতরের পূর্বে সরকার প্রদত্ত মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য এবং ক্বওমী মাদ্রাসায় প্রদত্ত অনুদানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ভিন্নভাবে এসব খাতে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এ সব প্রণোদণা এবং আর্থিক সহযোগিতা বাজেটের ওপর চাপ ফেললেও সরকার আগামী ১১ জুন বাজেট ঘোষণা করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বাজেট তৈরীর কাজ শুরু করে দিয়েছি।

গ্রামে হাঁস-মুরগী পালনকারী, মৎস্য চাষি, ছোট দোকানী, চায়ের দোকানদার, পণ্য বিক্রেতা-প্রত্যেকেই যেন তাদের জীবন-যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে সেজন্যই সরকারের এই উদ্যোগ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এই টাকা এমনি আসেনি। আমাদেরর অর্থনীতি সম্পূর্ণ স্থবির থাকায় এই টাকাগুলো সরকারকে ব্যাংক থেকে ধার করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারই এখন টাকা ধার করে সকলের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালু, জীবন যাত্রাটা চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

১ কোটি মানুষের তালিকা তৈরি করে ১০ টাকা কেজিতে চাল প্রদানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাহায্য গ্রহিতাদের তালিকা যাতে যথাযথভাবে হয় সেজন্য যাচাই-বাছাই করে করা হয়েছে।

এক সময়ে সমাজে অপাংক্তেয় শ্রেণি হিসেবে অতীতের সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া, বেদেসহ নিম্ন আয়ের সব লোকজনকে এর আওতায় আনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্যই তাঁর রাজনীতি’ কাজেই ‘মানুষের যাতে কষ্ট না হয়’ তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দিপু মনি সচিবালয় থেকে অনলাইনে পরীক্ষার ফলের সংক্ষিপ্তসার প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর আহমদ কায়কাউস এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এ বছর সারাদেশ থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ ২৩ জন কৃতকার্য হয়। সারাদেশে পাশের গড় হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

গত বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসিও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮শ’১৫ অংশগ্রহণ করে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১শ’ ৬৫ জন কৃতকার্য হয়। পাশের হার ছিল ৮২ দশমিক ২ শতাংশ।

এসএসসি’র ফল প্রকাশ হলেও করোনার বিস্তার রোধে সরকার স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই খুলে দেবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা এসএসসি, দাখিল এবং সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট দিলাম, হয়তো কলেজ আমরা এখন খুলবো না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা খুলতে পারছি না। কারণ, আমরা ধাপে ধাপে এগোতে চাচ্ছি। যাতে শিক্ষার্থীরা এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়।

আজকের শিক্ষার্থীরাই জাতির ভবিষ্যত আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘কাজেই জাতির ভবিষ্যতকে আমি ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। সে কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা উন্মুক্ত করবো না।

‘দেখি এই অবস্থার থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারলে পর্যায়ক্রমে আমরা এগুলো উন্মুক্ত করবো। তবে, সবাইকে আমি অনুরোধ করবো সবাই যাতে ঘরে বসে একটু পড়াশোনা করে।