ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন

0
1594

অঘোষিত ধর্মঘট পালনের সময় বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিকদের আচরণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পুরোধা ও চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি দিয়ে অশালীণ বক্তব্যসহ পোস্টার ছাপিয়ে তা বিভিন্ন স্থানে লাগায় পরিবহন শ্রমিকরা। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। এঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন তিনি।

অনেক স্থানে ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টার বা ফেস্টুন টানানো হয়। তাতে ঝাড়ু ও জুতার মালা বিষয়টিকে আরও অপমানজনকভাবে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়। এসব ঘটনায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এ ব্যক্তিত্ব ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন। তিনি এ কষ্ট পাওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন বিবিসি বাংলার কাছে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘কখনো-কখনো খারাপ লাগে। এতোটাই খারাপ লাগে যে যাদের জন্য আমি এতো কিছু জলাঞ্জলি দিয়েছি কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়। আমি আমার সিনেমার ক্যারিয়ার শেষ করেছি নিরাপদ সড়কের জন্য। আমার সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করেছি’।

শ্রমিকরা ইলিয়াস কাঞ্চনকে এতো অপছন্দ করেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য যে আন্দোলন সেটি তার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। তার প্রতি শ্রমিকদের ক্ষিপ্ত হবার এটিই কারণ বলে মনে করেন তিনি। ‘শ্রমিকরা মনে করে, সড়ক দুর্ঘটনায় কারো হাত নেই। এটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আমি কেন বিষয়টা নিয়ে বলবো? তারা এটাই মনে করে।’

তবে ট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম স্বীকার করেন যে সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বিভিন্ন সময় টেলিভিশনে নানা মন্তব্য এবং দাবি তোলায় শ্রমিকদের কেউ কেউ তার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তবে শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম দাবি করেন, ইলিয়াস কাঞ্চন তাদের প্রতিপক্ষ নয়। বলেন, ‘লাখ-লাখ শ্রমিকের ভেতরে উত্তেজনা হইতেই পারে। শ্রমিকের ব্যাপারটা কন্ট্রোল করা অনেক কষ্ট।’

তবে ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার পেছনে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের উস্কানি রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই শ্রমিকরা নেতাদের কথা দ্বারা প্রভাবিত। নেতারা যা বলে শ্রমিকরা তাই শোনে। তাদের বলা হয়, সড়কে যা কিছু হোক না কেন আমরা আছি। সেটা ন্যায় হোক, অন্যায় হোক,যা কিছু হোক।’

ইলিয়াস কাঞ্চন প্রশ্ন তোলেন, ‘এই মালিক সমিতির নামে শ্রমিক সমিতির নামে যে কোটি-কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে, সে চাঁদা কোন উন্নয়নের কাজে লাগে?’ তিনি অভিযোগ করেন, মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের উন্নয়ন চায় না। কারণ শ্রমিকরা যদি যথাযথ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে কাজ করে তাহলে তাদের কাছ থেকে সংগঠনগুলো কোনো চাঁদা নিতে পারবে না।

মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি করেছে গত কয়েকদিনের ‘কর্মবিরতি’র সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মবিরতি পালন করেছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন প্রশ্ন তোলেন, মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর নির্দেশে যদি আন্দোলন না হয়ে থাকে, তাহলে তাদের নির্দেশে আন্দোলন প্রত্যাহার হয় কিভাবে?

বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকরা। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী নতুন সড়ক পরিবহন আইন খতিয়ে দেখার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, আইনের কোনো বিষয় নিয়ে ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। সহধর্মিনী জাহানারা কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।