পল্লবী বিস্ফোরণে আইএস জড়িত নয়

0
486

ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্লবী থানায় বিস্ফোরনের ঘটনা দৃষ্টি কেড়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। বিশেষ করে রিটা কাৎজ আইএস-কে জড়িয়ে ট্যুইট করার পর বিষয়টি আলোচনার সামনের সারিতে স্থান পায়। তবে বাংলাদেশ পুলিশ স্পষ্ট করেই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএস-এর সম্পৃক্ততা নাকচ করে দেয়। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাদেশ পুলিশের ধারণাকে সমর্থন করেই খবর পরিবেশন করেছে। আর্ট নিউজের পাঠকদের জন্য বিবিস পরিবেশিত খবরটি দেয়া হলো:

“ঢাকার পল্লবী থানার ভেতর বিস্ফোরণের দায় ইসলামিক স্টেট স্বীকার করেছে বলে অনলাইনে জিহাদি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স এক টুইটে বুধবার জানানোর পর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এটি কোন সন্ত্রাসী হামলা নয়।

সুইডেন ভিত্তিক জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ তাসনিম খলিল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিনিও মনে করেন যে এই হামলা আইএস বা আইসিস-এর কাজ নয়।

বিস্ফোরণের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বিবিসিকে বলেন, অপরাধীদের কাছ থেকে আগে উদ্ধার করা একটি বোমা সেখানে বিস্ফোরিত হয়েছে।

তবে কথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখে, এমন সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স -এর পরিচালকে রিটা কাতজ্ একটি টুইট বার্তায় গতকাল জানান, ঈদুল আজহার আগে আইএস নতুন দফা হামলা প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ঢাকায় এই হামলা চালিয়েছে বলে তারা দাবি করছে।

মি. খলিল বলছেন সিরিয়া এবং ইরাকে আইসিসের পতনের পর থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে, অন্তত গত কয়েক মাস ধরে এধরনের হামলা বা এধরনের বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়িত্ব স্বীকার করার জন্য আইসিসের প্রক্রিয়ায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

“আগে যখন দেখতাম আইসিস কোন ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করত, এমনকী বাংলাদেশেও, তখন তারা কিন্তু এক ধরনের প্রমাণ দিত, যেখানে পরে ভেরিফাই করা যেত যে- আসলেই তারা যা বলছে- তারা সত্য দাবিটিই করছে।

“কিন্তু এই মুহূর্তে, অন্তত বেশ কয়েক মাসের কথা আমি বলতে পারি- এধরনের দাবি শুধুমাত্রই দাবি। এগুলোর পক্ষে কোনধরনের কনফার্মেশন (সত্যতা) বা সেকেন্ডারি কনফার্মেশান পাওয়া যায় না।”

‘পুলিশের বিবরণ বিশ্বাসযোগ্য’

মি. খলিল বলছেন পল্লবীর ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া যে বিবরণ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে “আমার কাছে সেটাকেই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে” এবং তার মতে আইসিস-এর পক্ষ থেকে খুবই অপরিচিত একটি চ্যানেলে দাবি করা হয়েছে যে তারা এটার সাথে আছে, কিন্তু এর পক্ষে অন্য কোনধরনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তারা এখনও পর্যন্ত দেয়নি। তিনি বলছেন বাংলাদেশে পুলিশের ওপর গত কয়েকটি যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও কিন্তু আইসিস-এর পক্ষ থেকে সেকেন্ডারি কনফার্মেশন বা দ্বিতীয় সূত্র থেকে নিশ্চিত করার মত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মি. খলিল বলছেন: “আইসিস-এর যে জিহাদি বা মূল প্রচারণা চ্যানেলগুলো ছিল ফেসবুকে বা টেলিগ্রামে, এমনকি ডার্ক ওয়েব-এও (গুপ্ত চ্যানেল) কিছু কিছু জায়গায় ছিল, সেগুলো কিন্তু এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়- বা নেই বললেই চলে।”

ফলে, তিনি বলছেন তাদের সমর্থকরা যেসব জায়গায় লেখালেখি করত বা কথা বলত, সেগুলো এখন অনেকটাই অকেজো হয়ে রয়েছে।

“ধরুন আগে ২০১৬ বা ১৭ সালে আমরা যেটা দেখেছি, এরকম কোন বিস্ফোরণের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার দাবি যখন তারা করত, তখন তাদের সমর্থকরা এসব জায়গায় উল্লাস করত, বা সাবাস জানাত। এই ব্যাপারগুলা বেশ অনেকদিন ধরেই কিন্তু অতটা দেখা যাচ্ছে না।”

‘আল-কায়দা এখনও আছে’

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দাবি করে থাকে যে জঙ্গী দমনের ক্ষেত্রে তারা তাদের জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ও পল্লবী থানার বিস্ফোরণের পর বিবিসিকে বলেছেন, থানার ভেতর কোন আইইডি’র (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বা পেতে রাখা কোন বোমার বিস্ফোরণ ঘটেনি, থানার মধ্যে অপরাধীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ছোট একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়া ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ বিবিসিকে আরও জানায় যে গোপন সূত্রের খবরে তিনজন ভাড়াটে খুনিকে গ্রেপ্তার করেছিল পল্লবী থানার পুলিশ, যাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল আর আর ওয়েইং মেশিনের (ওজন পরিমাপ করার যন্ত্র) মত দেখতে একটি বস্তু তারা উদ্ধার করেছিল। সেই বস্তুটিই গতকাল সকালে থানার মধ্যে বিস্ফোরিত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ জুড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল, যেখানে পুলিশকে টার্গেট করে বা পুলিশ স্থাপনায় হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

তসনিম খলিল মনে করেন বাংলাদেশে আইসিস-এর পতন হয়েছে।

“আইসিস-এর আগে বাংলাদেশে যে ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) বা সমর্থনের ব্যাপার ছিল, সেটা অনেকদিন নেই। তবে জিহাদি গ্রুপগুলোর মধ্যে আল-কায়দা এখনও প্রবলভাবে আছে এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন থেকে তাদের একটা ট্রানজিশন (রূপান্তর) হচ্ছে। তারা একটা গোপন রাজনৈতিক সংগঠন বা আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকাল পার্টির দিকে যাচ্ছে।”

তিনি বলছেন আল-কায়দা বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম বেশ জোরদার করেছে।

“এই জায়গাটিতে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বাহিনী এখনও হাত দিতে পারেনি।”

জিহাদি স্রোত ধাক্কা খেয়েছে

তসনিম খলিল বলছেন, সিরিয়া ও ইরাকে আইসিস-এর পতনের পর “জিহাদি যে একটা স্রোত ছিল, সেটা ধাক্কা খেয়েছে, কারণ প্রচুর তরুণ পুরুষ ও নারী যারা ইরাক ও সিরিয়া গিয়েছিলেন তারা অনেকে মারা গিয়েছেন, অনেকে এখন আটক অবস্থায় আছেন।”

কিন্তু অন্য দিকে, তিনি বলছেন, আল কায়দার একটা অংশ এখনও সিরিয়াতে এবং আফ্রিকার কিছু জায়গায় বেশ সক্রিয় রয়েছে। এবং বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও আল কায়দার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। “তারা মূলত জনসমর্থন আদায় করার লক্ষ্যে এখন কাজ করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশে যে ইস্যুগুলো আসলে মুসলমানদের ধর্মীয় ও বিভিন্ন ইমোশনের সাথে রেসোনেট করবে (মুসলিমদের সমর্থন পাবে) তারা সেই সমস্ত বিষয়কে হাইলাইট করছে,” তিনি বলেন।

মি. খলিল বলেন তার কাছে মনে হয়েছে মিলিটারির ওপর যে হামলাগুলো তারা করত, অনেকদিন ধরেই আল কায়দা সেখান থেকে সরে আসছিল। এখন তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি গঠনের লক্ষ্যে তাদের কাজ সুসংহত করছে।”